তুহিন চৌধুরী, মিশিগান (যুক্তরাষ্ট্র)।।
সঙ্গীত, সংস্কৃতি আর স্বদেশীয় আবেগের অপূর্ব সম্মিলন ঘটেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির হৃদয়ে নতুন করে নাড়া দিয়ে, প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস আর আনন্দঘন পরিবেশে শেষ হলো দু’দিন ব্যাপী ‘বাংলাদেশি-আমেরিকান ফেস্টিভাল–২০২৫’।
প্রবাস জীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির স্পর্শে রাখতেই এমন মনোমুগ্ধকর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগান (BAM)।
মিশিগানের ওয়ারেন সিটি-তে অনুষ্ঠিত এই উৎসবটি ছিল শুধুমাত্র বিনোদনের নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক পুনর্মিলনী, যেখানে প্রবাসীরা পেয়েছেন বাংলাদেশের গন্ধ, মাটি আর মানুষের ছোঁয়া।
সুরে-সুরে মাতোয়ারা ছিল হাজারো প্রবাসী দর্শক
এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সঙ্গীত। মঞ্চে একে একে পারফর্ম করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পীরা—
প্রতীক হাসান, প্রীতম হাসান, বিন্দু কণা, শুভ্র দেবসহ আরও অনেকে। তাঁদের গান আর উপস্থিতিতে যেন মুহূর্তেই জেগে উঠেছিল উৎসবপ্রাঙ্গণ। পুরো এলাকা জুড়ে বাজছিল করতালি আর উচ্ছ্বসিত চিৎকার।
মিশিগান, নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, কানাডা এমনকি লন্ডন থেকেও সঙ্গীতপ্রেমীরা ছুটে এসেছিলেন এই আয়োজনে অংশ নিতে। বিশেষ চমক হিসেবে ছিল মেক্সিকান ও ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পীদের পরিবেশনা, যা পুরো অনুষ্ঠানকে দিয়েছে এক বহুজাতিক রূপ। এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা নিজেদের মতো করে ভেসেছেন আনন্দ আর নাচ-গানে।
খাবার-দাবার ও বাণিজ্যিক স্টল ছিল অতুলনীয় আকর্ষণ
সঙ্গীতের পাশাপাশি এই মেলায় ছিল শতাধিক দেশীয় পণ্যের স্টল। পোশাক, অলংকার, ঘরোয়া সামগ্রী থেকে শুরু করে ছিল বাচ্চাদের খেলনা ও বইয়ের দোকান। খাদ্যপ্রেমীদের জন্য ছিল দেশীয় স্বাদের বিরিয়ানি, ফুচকা, চটপটি, শিঙাড়া, জিলাপি, পায়েস সহ বাহারি খাবারের আয়োজন। প্রবাসে থেকেও যেন ফিরে পাওয়া গেল বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা।
বেচাকেনাও হয়েছে ব্যাপক হারে। বিক্রেতারা জানান, এধরনের উৎসব না শুধু অর্থনৈতিক, বরং সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে তোলে।

পারিবারিক ও সামাজিক মিলনমেলা
এই উৎসব ছিল একাধারে সাংস্কৃতিক উত্সব, আবার প্রবাসীদের জন্য এক পারিবারিক মিলনমেলার সুযোগও। ছোট-বড় সবাই মিলে উপভোগ করেছেন দেশীয় গান, খাবার, ও পরিচিত মুখের সান্নিধ্য।
অনেকের দেখা হয়েছে বহুদিন পর, কারো বা হয়েছিল নতুন পরিচয়—সব মিলিয়ে প্রাণবন্ত এক সামাজিক সমাবেশ।
আয়োজকদের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিশিগান (BAM)-এর সভাপতি ও আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আমরা চাই, তারা গর্ব করে বলুক—আমরা বাংলাদেশি।”
তাঁরা আরও জানান, ভবিষ্যতে এ ধরণের আরও বৃহৎ পরিসরে উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে থাকবে সাংস্কৃতিক কর্মশালা, নাট্যউপস্থাপনা, শিশুদের প্রতিযোগিতা ও দেশীয় হস্তশিল্প প্রদর্শনী।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশি সংস্কৃতি শুধু প্রবাসীদের মধ্যেই নয়, বরং স্থানীয় আমেরিকান, ভারতীয় ও ল্যাটিনো দর্শকদের মধ্যেও আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এই উৎসব। এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশি সংস্কৃতি এখন বিশ্ব দরবারে শুধু টিকে নয়, বরং উজ্জ্বলভাবে উদ্ভাসিত হচ্ছে।
পরিশেষে‘বাংলাদেশি-আমেরিকান ফেস্টিভাল–২০২৫’ শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়—এটি ছিল হৃদয়ের টান, শিকড়ের খোঁজ এবং সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকার। প্রবাসের জীবনে এমন একটি আয়োজন দীর্ঘদিন মনে রাখবে সবাই।
আয়োজকদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আগামী বছর এই আয়োজন আরও বড় পরিসরে, আরও বৈচিত্র্যে ফিরে আসবে।