শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কেন বাংলাদেশে সোনা ক্রেতাদের জন্য বেশি ব্যয়বহুল গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র দেশের জন্য হুমকি: চিফ প্রসিকিউটর আফগানিস্তানের সংঘাত কমাতে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ পশ্চিম তীর দখলের বিল ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার জন্য হুমকি: রুবিও তিউনিসিয়া উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, মৃত অন্তত ৪০ মেসি–রোনালদোদের জাদু আগেই দেখিয়ে গেছেন পেলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠক বাতিল, কূটনৈতিক আলোচনা তীব্র বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি আসিয়ান সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছেন মোদি, যাবেন না মালয়েশিয়া ৪৪তম বিসিএসে রিপিট ক্যাডার বিধি সংশোধনে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষর: ফেসবুকে সারজিস
শিরোনাম :
কেন বাংলাদেশে সোনা ক্রেতাদের জন্য বেশি ব্যয়বহুল গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র দেশের জন্য হুমকি: চিফ প্রসিকিউটর আফগানিস্তানের সংঘাত কমাতে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ পশ্চিম তীর দখলের বিল ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার জন্য হুমকি: রুবিও তিউনিসিয়া উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবি, মৃত অন্তত ৪০ মেসি–রোনালদোদের জাদু আগেই দেখিয়ে গেছেন পেলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠক বাতিল, কূটনৈতিক আলোচনা তীব্র বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি আসিয়ান সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছেন মোদি, যাবেন না মালয়েশিয়া ৪৪তম বিসিএসে রিপিট ক্যাডার বিধি সংশোধনে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষর: ফেসবুকে সারজিস
নোটিশ :
Eid Bazar ! Eid Bazar ! Held on 30th March Saturday @ Paterson Firemanhall, Adress 226 Walnut ST, Paterson, NJ 07522 /  9th International Women's Day Award Held on April 27, 2024 @ The Brownston, 251 West Broadway, Paterson, NJ .7522 Ticket 70 Dollar Per Person Get Tickets From www.eventbrite.com

গানের সুরে বেঁচে থাকবেন ফরিদা পারভীন

রিপোর্টার / ৩৫ বার
আপডেটের সময় : শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

ড. সাইমন জাকারিয়া

ফরিদা পারভীনের পরিচয়কে গণ্ডিবদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। যৌবনেই তিনি নিজের বহুমাত্রিক পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একদিকে তিনি লালন সাঁইজির গানের অনন্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন, অন্যদিকে আবু জাফরের লেখা ও সুরে, এমনকি দ্বৈতকণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে বা আধুনিক বহু গান গেয়ে বাংলাদেশের সংগীতের ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন

বহুমাত্রিক গান গেয়ে নিজের মৌলিক পরিচয়কে প্রতিষ্ঠা করার এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। এক্ষেত্রে ফরিদা পারভীন অনন্য। একথা ঠিক, তিনি সর্বাধিক সম্মান অর্জন করেছেন লালন সাঁইয়ের গান গেয়ে। লালন সাঁইয়ের গানের সুর তিনি রপ্ত করেছিলেন লালনের গানের তিনজন কিংবদন্তি সাধকশিল্পী—বীর মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলী সাঁই, খোদাবক্স সাঁই, করিম শাহের কাছ থেকে। কিন্তু তিনি ফকিরি গায়ন-পদ্ধতিকে নিজের কণ্ঠ দিয়ে কিছুটা নবায়ন করেছিলেন, যা শ্রোতার কাছে হৃদয়গ্রাহী হয়েছিল।

জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কুষ্টিয়ায় বসবাস করেছেন, শেষ ২২-২৩ বছর তিনি ঢাকাতে ছিলেন। আসলে, কুষ্টিয়া শহরে অবস্থানকালেই তিনি সংগীত চর্চার মাধ্যমে জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। মফস্বল শহরে বাস করে সংগীতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার এ ধরনের দৃষ্টান্ত সেকালে খুবই বিরল ছিল।

মজার ব্যাপার হলো, তিনি কুষ্টিয়াতে অবস্থানকালেই সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক এবং ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিতে ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটি গেয়ে ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর জেলার সিংড়া থানার সাঁঐল গ্রামে। নাটোরের জগৎপুর, সাঁঐলের স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শুরু করলেও পিতা দেলোয়ার হোসেনের চাকরিসূত্রে তার গানের হাতেখড়ি হয় মাগুরা জেলায়। সেটা ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা।

তিনি কুষ্টিয়াতে অবস্থানকালেই সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক এবং ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিতে ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটি গেয়ে ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

তবে, তার ভেতর সুরের সঞ্চার ঘটেছিল আরও আগে। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘প্রথম যখন আমার ভেতর সুরটা যায়, আমার মায়ের দুধ খাই তখন। সে সময় আমার সেন্স একটু একটু কাজ করত। আমি কিন্তু অনেক বড় হয়ে আমার মায়ের দুধ খেয়েছি। ঘুম পাড়ানোর সময় মার দুধ খেতাম, আর মা গান করত। মায়ের সেই সুরটাই আমার ভেতর রয়ে গেছে, সেই সুরটা এখনো আমি ভুলতে পারি না। তখনকার হিন্দি গান, লতাজির অনেক গান মা গাইত। সিনেমা দেখত তো খুব, তখনকার সিনেমার ওইসব গান গাইত। আমার মায়ের কিন্তু খুব ভালো গানের সুর।’

মাগুরায় স্কুলে পড়ার সময়ে ফরিদা পারভীনকে সারগাম দিয়ে গানের হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তী। এরপর যখন তিনি মাগুরা গার্লস স্কুল থেকে কুষ্টিয়া গার্লস স্কুলে যান, তখন ওস্তাদ ইব্রাহিমের কাছে ক্লাসিক্যাল শেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার রবীন্দ্রনাথ রায়, মোতালেব বিশ্বাস, ওসমান গণি’র কাছে ক্লাসিক্যাল শেখেন।

দ্বিতীয় পর্বের সংগীত জীবনে নজরুলের গানের শিক্ষা গ্রহণ করেন কুষ্টিয়ার ওস্তাদ আবদুল কাদের-এর কাছে, তারপর মেহেরপুরে মীর মোজাফফর আলী’র কাছে। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুলগীতির শিল্পী হন।

মূলত নজরুল সংগীতের শিল্পী হিসেবেই ফরিদা পারভীনের অভিযাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে তিনি লালন, আধুনিক ও দেশাত্মবোধক শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফরিদা পারভীনকে লালন সংগীতের দিকে নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী সাঁই।

১৯৭৩ সালে কুষ্টিয়ায় লালন সাঁইজির আখড়াকেন্দ্রিক একটি অনুষ্ঠানে পূর্ণদাস বাউলের আগমন ঘটে। সেই আসরে ফরিদা পারভীন তার পিতা ও মোকছেদ আলী সাঁইয়ের আগ্রহে প্রথম লালন সাঁইয়ের গান পরিবেশন করেন। একই সময়ে তিনি আবু জাফরের কাছ থেকে কিছু আধুনিক গানের দীক্ষা গ্রহণ করেন।

১৯৭৩ সালে দিকে ঢাকা রেডিওর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে মোকসেদ আলী সাঁইয়ের আগ্রহে ফরিদা পারভীন কিছু লালনের গান পরিবেশন করেন। এরপর থেকে তিনি লালনের গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং বিভিন্ন সময়ে মোকসেদ আলী সাঁই, খোদা বক্স সাঁই, করিম শাহ, ব্রজেন দাস, বেহাল শাহ, ইয়াসিন শাহের কাছে লালনের গানের তালিম নেন।

লালন সাঁইজির গানগুলো মূলত তত্ত্বনির্ভর। সেই তত্ত্বনির্ভর গানগুলোয় আধুনিক সুর-তাল সংযোজনার যৌক্তিকতা কী? এ সম্পর্কে ফরিদা পারভীন বলেন, “হ্যাঁ, লালনের গানগুলো তত্ত্বনির্ভর। সুর এবং লয় কিন্তু মানুষকে আলোড়িত করে। যেমন ‘মিলন হবে কতদিনে’ এটা একটা আকুতির গান। কিন্তু এই গানটার রিদম মানুষকে নাচিয়ে তোলে। এই ভেবে আমি এখন লালনের গানকে বৈতালিকে গেয়ে নতুন একটা কিছু সংযোজন করেছি। কারণ, গানের সুর এবং কথার মাদকতা লয়টা দিলে নষ্ট হয়ে যায়। যেমন ‘সময় গেলে সাধন হবে না’। এটা কিন্তু একচ্ছত্রভাবে আমি বৈতালিকে করেছি। আমি দেখেছি গানের বাণীটা একরকম আর সুর-তাল আরেকরকম, তাই আমি গানটা শুধু সুরে বৈতালিকে গাইলাম, এর সুরের দিকটা আরেকটু আলোড়িত করে।”

তিনি তার গায়কী নিয়ে লালনপন্থি সাধকশিল্পীদের আপত্তির কথাও জানতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন—‘একটা কথা কিন্তু মনে রাখবেন, আমি লালনের গান গুরু ধরেই শিখছি—মোকসেদ সাঁই, খোদাবক্স সাঁই, করিম সাঁই আমার লালন সংগীতের গুরু। তবে এটা বলতে পারেন যে, যখন একটি গান আরেকটি পরিশীলিত গলায় ধারণ করা হয়, তখন তার চেহারাটা একটু আলাদা হয় বৈকি।’

ফরিদা পারভীনের পরিবেশিত লালনের গান বাংলাদেশের মানুষকে শুধু নয় আপ্লুত করেছে বহুদেশের মানুষকে। তাই তো ২০০১ সালে জাপানে ‘ফরিদা পারভীন প্রজেক্ট কমিটি’ গঠিত হয়েছিল, এমনকি ফ্রান্সেও ফরিদা পারভীনকে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছিল।

লালন সাঁইয়ের গানই ফরিদা পারভীনের একমাত্র পরিচয় নয়। তার কণ্ঠে আবু জাফরের লেখা ও সুরে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ দেশাত্মবোধক গানটি প্রথম থেকেই বাংলার আকাশে-বাতাসে, কখনো তাদের যুগলকণ্ঠে, কখনো ফরিদা পারভীনের একক কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে আসছে।

লালন সংগীত নিয়ে ফরিদা পারভীন জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ আরও বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু লালন সাঁইয়ের গানই ফরিদা পারভীনের একমাত্র পরিচয় নয়। তার কণ্ঠে আবু জাফরের লেখা ও সুরে ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ দেশাত্মবোধক গানটি প্রথম থেকেই বাংলার আকাশে-বাতাসে, কখনো তাদের যুগলকণ্ঠে, কখনো ফরিদা পারভীনের একক কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে আসছে।

এছাড়াও তাদেরই যুগলসৃজন আধুনিক গান ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’ এবং ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’ গান দু’টির কথাইবা কে ভুলেছে কবে! ফরিদা পারভীন ও আবু জাফরের গাওয়া ‘তুমি রাত আমি রাত জাগা পাখি’।

দাম্পত্য সঙ্গী হিসেবে আবু জাফরকে বিয়ে করলেও পরে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে ফরিদা পারভীন গাজী আবদুল হাকিমকে বিয়ে করেন। ফরিদা পারভীনের সাথে লালন সংগীত একাকার হয়ে আছে। সংগীতই তার সব। তাই সংগীতের ভুবনে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন।- ড. সাইমন জাকারিয়া : নাট্যকার ও গবেষক

এশিয়ানপোস্ট / আরজে


এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর