সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন
নোটিশ :
Eid Bazar ! Eid Bazar ! Held on 30th March Saturday @ Paterson Firemanhall, Adress 226 Walnut ST, Paterson, NJ 07522 /  9th International Women's Day Award Held on April 27, 2024 @ The Brownston, 251 West Broadway, Paterson, NJ .7522 Ticket 70 Dollar Per Person Get Tickets From www.eventbrite.com

সুনামগঞ্জ -৪ আসনে ধানরে শীষ চান হোসাইন পাঠান বাচ্চু

রাজু / ৬৮ বার
আপডেটের সময় : সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:১৫ অপরাহ্ন

বিএনপির আদর্শে উজ্জ্বল এক প্রবাসী যোদ্ধার গল্প

বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হোসেন পাঠান বাচ্চু, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি বিএনপি নর্থ শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্ম নেওয়া এই নেতা কৈশোর থেকেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ ও হাত মেলানোর স্মৃতি তার জীবনের রাজনৈতিক পথচলার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে রয়েছে।

প্রবাস জীবনের শুরু থেকেই তিনি শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। নিউ জার্সির বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন ও সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন।

দীর্ঘ প্রবাস জীবনে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার পেছনে তার রয়েছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। ২০১০ সালে গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর দীর্ঘ রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার সময়ও তিনি আদর্শে অটল ছিলেন। অবশেষে ২০২২ সালে সংগঠন পুনর্গঠিত হলে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং এখনও সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন তার রাজনৈতিক যাত্রা, প্রবাস জীবনে দলীয় কর্মকাণ্ড এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ গঠনে তার ভাবনা ও অঙ্গীকারের কথা।

-সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এশিয়ান পোস্টের সম্পাদক মোহাম্মদ এনাম চৌধুরী

এশিয়ান পোস্টঃ আপনার পরিচয়টা দিন।

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ  আমি হোসেন পাঠান বাচ্চু। একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আমি নিউজার্সি বিএনপি নর্থ-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

দীর্ঘদিন ধরে আমি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্যাটারসন শহরে বসবাস করছি এবং এখনো এখানেই আছি। ইনশাল্লাহ, ভবিষ্যতেও এই কমিউনিটির সঙ্গেই থাকতে চাই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছি। সেই আদর্শকে অন্তরে ধারণ করে আমি আজ অবধি এগিয়ে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় রাখব ইনশাল্লাহ। আমার লক্ষ্য — এই মহান দল ও তার আদর্শকে কাজে লাগিয়ে আমৃত্যু দেশ, জাতি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রাখা।

 

এশিয়ান পোস্টঃ কবে থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। সেই সময় আমাদের জাতীয় নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সুনামগঞ্জ সফরে আসেন — গ্যাস ও টিভি স্টেশন চালু করার উদ্দেশ্যে এবং আমাদের স্কুল পরিদর্শন করতে। তিনি আমাদের গ্রামের স্কুলে এসেছিলেন এবং আমি তখন ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর সঙ্গে প্রথমবারের মতো করমর্দন (হ্যান্ডশেক) করার সুযোগ পাই।

সেদিন তিনি আমাকে ৫০ টাকা সম্মাননা দেন — যা আমার জীবনের এক স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে আছে। সেই এক অভিজ্ঞতা আমার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাঁর ব্যক্তিত্ব, দেশপ্রেম, এবং নেতৃত্বগুণ আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। তখন থেকেই আমার মনে হয়েছিল, জিয়াউর রহমান কেবল একজন রাষ্ট্রনায়কই নন, বরং তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা একজন দূরদর্শী নেতা।

এই স্মৃতির সূত্র ধরেই আমার রাজনৈতিক চেতনার বীজ বপিত হয়। সেই সময় থেকেই আমি শহীদ জিয়ার আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে আসছি এবং আজও আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আদর্শে অবিচল আছি।

 

এশিয়ান পোস্টঃ সাংগঠনিকভাবে আপনি কবে থেকে জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে যুক্ত হলেন?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ যদিও আমার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সুনামগঞ্জে সম্পন্ন হয়, উচ্চশিক্ষার জন্য আমি ঢাকায় চলে যাই এবং নটর ডেম কলেজে অধ্যয়ন করি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর, আমি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাই — সেই সময়ের শেষ দিকে।

তখনও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কোনো গঠনতন্ত্রভিত্তিক কাঠামো ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমরা যারা জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাস করতাম, তারা দলীয় আদর্শের চর্চা চালিয়ে যেতাম।

পরবর্তীতে, ৯/১১-এর ঘটনার পরে যখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিউইয়র্ক সফরে আসেন, তখন আমি আমার পিতা মরহুম সাইফুর রহমানের সঙ্গে উনার সঙ্গে সাক্ষাতে যাই। সেই সময় আমাদের কমিউনিটির কয়েকজন সক্রিয় নেতা ছিলেন, যাদের সঙ্গে মিলে আমরা সফরকালীন সময়ে বেগম জিয়াকে সহযোগিতা করতাম—গাড়ি করে যাতায়াত, নিরাপত্তা ও অন্যান্য দায়িত্বে অংশ নিতাম। যদিও তখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং দায়িত্ববোধ থেকে দলের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

এশিয়ান পোস্টঃ প্রবাসে সাংগঠনিক কর্মকান্ড গুলো নিয়ে কথা বলেন।

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ সাধারণভাবে বলতে গেলে, সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম বিশেষভাবে দৃশ্যমান ছিল না। বিএনপির পক্ষ থেকেও তেমন কোনো সংগঠন ছিল না। পরে প্রথমবারের মতো বিএনপির একটি সংগঠন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর, শুরুতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য — বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজার্সির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করি। সেই সময় আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ নানা জাতীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজন করতাম। এইসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হই এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করে যাই।

সময় যত গড়িয়েছে, প্রবাসে একে একে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। তখন নারীদের শিক্ষাবিষয়ক একটি উদ্যোগের সঙ্গে আমি যুক্ত হই, এবং সেখান থেকেই আমার রাজনৈতিক সক্রিয়তা আবার শুরু হয়। ধীরে ধীরে আমরা বিএনপিকে একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে রূপ দিতে সক্ষম হই।

এর ধারাবাহিকতায়, ২০১০ সালে আমাদের মিলন ভাইয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তবে ২০০৮ সালের পর সেই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়গুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সময় ধরে বর্তমান সরকারের শাসনামলে আমাদের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে।

দীর্ঘ প্রায় ১৭-১৮ বছর পর, ২০২২ সালে বিএনপির কার্যক্রম পুনরায় সংগঠিত হয়। আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক জনাব আনোয়ার হোসেন খোকন ভাইয়ের নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করা হয়, এবং আমি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই।

এই দায়িত্ব আমি আজ পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছি এবং দলের আদর্শে অবিচল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি।

এশিয়ান পোস্টঃ আপনি কি আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করছেন? যদি হ্যাঁ, তবে আপনি মনে করেন কে কে আপনার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন? এবং যদি শেষ পর্যন্ত আপনি মনোনয়ন না পান, সে ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হবে—দয়া করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন কি?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমি আগেই বলেছি, আমার পরিকল্পনা স্পষ্ট—গত চল্লিশ বছরের প্রবাস জীবনে, বিশেষ করে আমেরিকায় অর্জিত ব্যবসায়িক, মূলধারার (সধরহংঃৎবধস) এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি সুনামগঞ্জের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। আমার লক্ষ্য, একটি আধুনিক ও উন্নত সুনামগঞ্জ গড়া, যেখানে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে।

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যুব সমাজ একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। তারা চায় নতুন নেতৃত্ব, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ কিছু গোষ্ঠী ও পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসেছে। আমি সেই একচেটিয়া প্রভাব থেকে জনগণকে মুক্ত করতে চাই। পাশাপাশি, সুনামগঞ্জ পৌরসভাকে একটি সুন্দর, আধুনিক ও নাগরিক সুবিধায় সমৃদ্ধ শহরে রূপান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

যদি আমি দলীয় মনোনয়ন পাই, তাহলে দায়িত্ব নিয়ে সুনামগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করব। আর যদি মনোনয়ন না-ও পাই, তবুও আমি দলের নির্দেশনা অনুযায়ী, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করে যাব ইনশাআল্লাহ।

আমার অভিজ্ঞতা, চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনাগুলো যদি দল বা মনোনীত প্রার্থী কাজে লাগাতে চান, তাহলে আমি সবসময়ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। কারণ আমার একটাই লক্ষ্য—সুনামগঞ্জের উন্নয়ন ও নতুন প্রজন্মের জন্য একটি স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।

এশিয়ান পোস্টঃ এলাকায় গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে আপনি কীভাবে নিজেকে সক্রিয় রাখবেন?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমি সবসময়ই যাওয়া-আসার মধ্যে থাকি, কিন্তু আমার মন ও আত্মা সবসময়ই ধানের শীষের সঙ্গেই অটুটভাবে যুক্ত। যদি আমাকে মনোনয়ন না-ও দেওয়া হয়, তারপরও আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতি আমার শতভাগ শ্রদ্ধা, আনুগত্য ও ভালোবাসা বজায় রাখব। কারণ আমি কখনোই অন্য কোনো দলের কথা চিন্তা করিনি, করতেও পারি না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং ধানের শীষ প্রতীক আমার রাজনৈতিক জীবনের চালিকাশক্তি। এ আদর্শই আমি বুকে ধারণ করে আসছি, এবং ইনশাআল্লাহ শেষ পর্যন্ত তা-ই বহন করে যাব। বিএনপি ছাড়া আমার কাছে কোনো বিকল্প রাজনৈতিক অবস্থান নেই।

আমাদের পরিবারও একটি রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি পরিবার হিসেবে পরিচিত। আমার পিতা ছিলেন সুনামগঞ্জ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি (১৯৮০ সাল থেকে)। তিনি ১৯৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন, কিন্তু ততদিন পর্যন্ত তিনি শুধু বিএনপির সাথেই যুক্ত ছিলেন। তাঁর সন্তান হিসেবে আমি তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি এবং করছি। তিনি যেমন শহীদ জিয়ার দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন, আমিও ঠিক তেমনিভাবে সেই দর্শন লালন করছি।

আমার রাজনৈতিক পথচলায় বহুবার পিতার সঙ্গে দলীয় নেতৃবৃন্দের সংস্পর্শে এসেছি—জননেতা সাইফুর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রমুখ। এসব অভিজ্ঞতা আমার ভেতর জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতি এক গভীর দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করেছে।

আজকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা কঠিন সময় পাড়ি দিচ্ছি—গুম, খুন, দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে দলকে টিকিয়ে রাখার যে সংগ্রাম তিনি করছেন প্রবাস থেকেও, সেটি নিঃসন্দেহে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাঁর এই ত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

তাই আমি মনে করি, আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক শিক্ষা এবং প্রবাস জীবনের সংগঠনিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমি নিজ এলাকার উন্নয়ন ও দলের আদর্শ বাস্তবায়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারব ইনশাআল্লাহ।

এশিয়ান পোস্টঃ আপনি প্রবাসে অবস্থান করে কীভাবে সুনামগঞ্জের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমার সবসময়ই ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল। এখানে একটি বাস্তবতাও রয়েছে—আমাদের সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন ভাই ছাতক থেকে আসেন, কিন্তু তিনি নিয়মিতভাবে শহরের কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আন্দোলন-সংগ্রামের দায়িত্ব মূলত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ভাই দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন। আমি সবসময় তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি।

বিশেষ করে আর্থিক দিক থেকে আমি নীরবে-নিভৃতে সহযোগিতা করে এসেছি। নেতাকর্মীদের গতিবিধি, তাদের প্রয়োজনে কী লাগছে—এসব বিষয়ে আমি খোঁজখবর রাখতাম এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থসাহায্য দিতাম।

বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে মহাসমাবেশ বা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হতো, আমি নিজের সাধ্যমতো পাশে দাঁড়াতাম। মামলা-হামলার সময়, কিংবা কেউ কাতার প্রবাস থেকে সহযোগিতা করতেন—সেসব অর্থসাহায্যও সঠিকভাবে পরিচালনায় আমি ভূমিকা রেখেছি।

এছাড়া, ঢাকায় দলের সম্মেলন বা বিশেষ সভায় যোগ দিতে হলে, শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও আমি করেছি। এমনকি একদিনের জন্য হলেও আত্মীয়ের বাসায় থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছি, যাতে নেতাকর্মীরা কষ্ট না পান।

আমি কখনও কোনো অবস্থান দাবি না করে, দলের জন্য সাধ্যমতো যা পারি তা-ই করে গেছি—এখনও করছি এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও করে যাব।

আর যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, এবং নোবেল ভাইয়ের মতো কেউ মনোনয়ন পান, তাহলেও আমি তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা করব। তিনিও বলেছেন, তিনিও আমাকে সহযোগিতা করবেন। এটাই হওয়া উচিত একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা রেখে কাজ করব।

আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা সবাই এই ঐক্যের নীতি অনুসরণ করি, তাহলে বিএনপির মধ্যে আর কখনো বিভেদ থাকবে না। এটাই আমার আন্তরিক প্রত্যাশা।

 

এশিয়ান পোস্টঃ সম্প্রতি দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে আপনি উল্লেখযোগ্যভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে এলাকায় ইতিবাচক আলোচনার সৃষ্টি করেছেন। এই মানবিক উদ্যোগ সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলবেন কি?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ বিগত অনেক বছর ধরেই—প্রায় চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে—আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের পরিবার পারিবারিকভাবে সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছি। যেহেতু আমি একটি রাজনৈতিক সচেতন ও সমাজসেবায় নিবেদিত পরিবারের সন্তান, তাই আমাদের ওপর সবসময়ই মানুষের নানা দাবি ও প্রত্যাশা থাকে। আর আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করার।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমাজের অসহায়, দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কখনো টিউবওয়েল বসিয়ে দিয়েছি, কখনো অসুস্থদের চিকিৎসার খরচ বা অপারেশনের ব্যয় বহন করেছি। কারও ঘরবাড়ি মেরামত, টিন দিয়ে সহযোগিতা কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী নানাভাবে পাশে দাঁড়ানো আমাদের জন্য দায়িত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় আমরা নিয়মিত যাকাত, বস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে থাকি। রমজান মাসে এতিম ও দরিদ্রদের জন্য ইফতার এবং খাবারের ব্যবস্থা করি। কুরবানির সময় গরু কোরবানি দিয়ে সেই মাংস বিতরণ করাও আমাদের পরিবারের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।

এই কাজগুলো শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নয়—এটি আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধেরই অংশ। আমাদের পরিবার সবসময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

এশিয়ান পোস্টঃ সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে আপনার পারিবারিক ঐতিহ্য ও সামাজিক সম্মান দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী একনামে চেনে। এই প্রেক্ষাপটে আপনি রাজনীতির যে কঠিন ও প্রতিযোগিতামূলক পথে শামিল হয়েছেন, সেখানে নানা প্রতিপক্ষ ও চাপ থাকা সত্ত্বেও আপনি কি পিছিয়ে যাবেন, নাকি সেই ঐতিহ্য ও এলাকার জন্য নিজেকে আরও বেশি দায়বদ্ধ মনে করে সামনে এগিয়ে যাবেন?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ এইগুলা বলতে গেলে প্রথমেই আমাকে বলতে হয় আসে আমাদের পূর্বসুরী, আমার বাবা, আমার চাচা ওরা সবাই সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে যদিও জড়িত ঐটার উত্তরসূরি হিসেবে আমি যদি বলি আমি আমার বাবা মনে করেন ১০ শতক থেকে আমার জন্মের আগ থেকেই উনি ওই এরিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন, ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন উনি। উনার যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা উনি সুনামগঞ্জবাসী একদম আজ পর্যন্ত উনাকে মনে রেখে এবং তার উত্তরসূরি হিসেবে আমি বলতে পারি, যদি আমি ওইখানে দাঁড়াই, এখনও লোকেরা আমার আমাদের পরিচয় দিতে চাইলে আমার বাবার পরিচয় দিতে হয়। আমরা তো অনেকেই বাইরে ছিলাম। কিন্তু আমি মনে করি যে আমি যদি ওইখানে দাঁড়াই, শুধু পারিবারিক না, আমাদের ফ্যামিলির যে ঐতিহ্য ওইটার উপর ভিত্তি করে আমরা ইনশাল্লাহ। আমাদের যে একটা পজিটিভ পারসেপশন, মানুষের মধ্যে আমাদের ক্লিন ইমেইজ ওইটাই। আমরা নিজেকে গর্বিত মনে করি যে আমাদের কোনো কেলেঙ্কারি নাই। আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য এবং আমাদের চাচা কাজিন সবাই ওইরকম মুক্তহস্তে সবাইকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। আমরা শুধু রাজনীতি করি এইখানে নেওয়ার জন্য না দেওয়ার জন্য। আমাদের পরিবারটা দিয়েই আসছে এবং এখন পর্যন্ত আছে। কিন্তু আমরা কেউই তাদের সঙ্গে যোগ মিলিয়ে আমি চেষ্টা করতে আমার জীবনের এক প্রান্তে এসে যদি আমি তাদের সঙ্গে তাদের মতো শরিক হতে পারি, আমি নিজেকে ধন্য এবং গর্বিত মনে করব।

এশিয়ান পোস্টঃ আপনার ফ্যামিলির বাবা মা, ভাই বোন সবার সম্পর্কে বলেন।

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমার বাবা নাম ক্যাপ্টেন এম এ ওয়াদুদ পাঠান। রিটায়ার্ড উনি। উনি প্রথমেই ক্যাপ্টেন ছিলেন না। ক্লাস নাইনে উনি জয়েন করেছিল পাকিস্তান আর্মিতে। তারপর উনি রিটায়ার্ড হয় ১৯৫৬ সনে। তারপর উনি ১৯৫৬ সালে সুনামগঞ্জ চলে আসেন। ফ্যামিলির হাল ধরতে। তখন থেকেই উনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং আমার মা। উনার বাড়ি শেখঘাট, সিলেটে। উনি একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের। উনার দাদা একটা জমিদার ছিল। নাম শরাফত আলী চৌধুরী। সিএসপি ছিল তদানিন্তন ব্রিটিশ পিরিয়ডে উনি উনাকে একটা টাইটেল দেয়া হয়েছিল। দেওয়ান। যেহেতু উনি সিএসপি একটা চোরকে ধরেছিল যার দরুণ উনাকে একটা জমিদারী দিয়েছিল এবং উনারই মেয়ে আমার লিলি বেগম চৌধুরী আমার মা। উনি বিয়ে করে সুনামগঞ্জ চলে আসে। আমারা সাত -ভাইবোন এর মধ্যে আমি হইল ছয় নম্বর। আমার বড়বোন শিরিন বেগম উনি। ম্যাট্রিক পাশ । ১৯৬৯ সালে তার বিয়ে হয়ে যায়। তারপর উনি আমেরিকাতে আছেন। তারপর আমাদের দুই নম্বর বোন পারভীন আউয়াল। উনিও আমেরিকায় বসবাসরত উনার চারটা ছেলে নিয়ে বসবাস করছেন। তারপর আমার তিন নম্বর আপা হলেন হেলেন আলম। উনিও আমেরিকায় বসবাসরত। উনার হাজবেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম। আমার বড় ভাই। উনি আইবিএমের প্রোগ্রামার ছিল। এখানে আমেরিকায় বসবাসরত। এখন উনি রিটায়ার্ড।  পাঁচ নম্বরে আমার ইয়াসমিন বেগম। উনিও বিবাহিত। উনিও আমেরিকাতে আছেন। উনার হাজব্যান্ড ডক্টর ইলিয়াস আলী। তারপর ছয় নম্বর আলী হোসেন পাঠান বাচ্চু। আমি এখানে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত। তারপর আমার কেরিয়ার হইল। আমি একটা আইটি ইঞ্জিনিয়ার। তারপর আমি একটা রোবটিক্সের উপর আমার ডিগ্রি আছে। আর এইখানে বসবাস করার জন্য জীবনের তাগিদে এই ক্যারিয়ার ফেলে আমি এখন বর্তমানে বেঙ্গল ইন্সুরেন্স, রিয়েল স্টেট এইগুলা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং সামাজিক সংগঠনের আমাদের প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী আমি ওই রকম চিন্তা করতাম যে আমি এমন কিছু একটা দেই যাতে আমি আমার মানুষের সঙ্গে মিশে আমি কাজ করতে পারি। সেই সুবাদে আমি এই কাজগুলো করতাম। যদিও আমি আমার সাবওয়ে ছিল, আমি ফ্রেঞ্চাইজি ছিলাম। ঐগুলা বাদ দিয়ে আমি সমাজ সেবার জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখছি। যাতে আমার ভাবমূর্তির জন্য আমি ওই সার্ভিসগুলো দিয়ে যেতে পারি। আমার ছোট ভাই ফরিদ আহমদ পাঠান সে একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সে ইউএস আর্মিতে ছিল। আর এখন বর্তমানে সে রিটায়ার্ড। সেও কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

এশিয়ান পোস্টঃ আপনার পরিবার সম্পর্কে বলেন।

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমার ওয়াইফ হাসিনা পাঠান। উনি একজন মেডিকেল ইনফরমেশন টেকনোলজির উপর ডিগ্রি করে। উনি হসপিটালে কাজ করতেছে। আমার বড় ছেলে একটা আইটি স্টাডি করতেছে। দুই নম্বর ছেলে জাহিন পাঠান। সে একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিন নম্বর ছেলে। সে টেক্সাসে চাকরি করতেছে। মাস্টার্স করে সে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং তৎপরতার আরেকটা ডিগ্রি অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আমার তিন ছেলেই আমরা সুখী দম্পতি। এখানে বাস করতেছি সেই।

এশিয়ান পোস্টঃ বিদেশের মাটিতে আপনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমে জড়িত থেকেছেন মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, কর্মসংস্থান, ইমিগ্রেশনসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। পাশাপাশি গত এক দশকে দলীয় রাজনীতিতে নানা আন্দোলন-সংগ্রামেও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। এ বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমি একজন ব্যবসায়ী হলেও, রাজনীতি ও সমাজসেবার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছি। প্রবাসে দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলা সমিতি, উদযাপন কমিটি এবং বর্তমানে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজার্সির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি ভাদেশ্বর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার সংগঠনের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে কাজ করি। নিউ জার্সিতে আয়োজিত জাতীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতেও অংশ নিই ও সহায়তা করি।

দেশে এবং প্রবাসে—বিশেষ করে অসচ্ছল পরিবার, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী, গৃহহীন মানুষ, বা বন্যা-শীতার্তদের জন্য সবসময় যতটা সম্ভব সহযোগিতা করেছি। পাশাপাশি, বিএনপির জাতীয় ও স্থানীয় কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিই এবং বিভিন্ন সময় অর্থনৈতিকভাবে দলকে সহায়তা করি। বিশেষভাবে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপির আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমি ওয়াশিংটন ডিসি-তে বিক্ষোভ, মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদানে অংশ নিয়েছি। স্টেট ডিপার্টমেন্ট, কংগ্রেস সদস্য ও সিনেটরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছি।

এছাড়াও, সামাজিক মাধ্যম—বিশেষ করে টুইটারে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখি এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বদৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করি। আমার এই সমস্ত কাজ আমি দায়িত্ববোধ থেকে করে যাচ্ছি, কোনো স্বার্থে নয়। ভবিষ্যতেও সুযোগ পেলে আমি এই পথেই কাজ করে যেতে চাই, ইনশাআল্লাহ।

এশিয়ান পোস্টঃ আপনি দীর্ঘদিন প্রবাসে রাজনীতি করে এলেও সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মানুষের সেবায় নিবেদিত রয়েছেন। এই এলাকার অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা বঞ্চনা কিংবা উন্নয়ন ঘাটতি নিয়ে আপনার কী মতামত? কিছু বলবেন?

হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ সুনামগঞ্জ প্রকৃতপক্ষে একটি ভাটি অঞ্চলভিত্তিক জেলা, যার প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি একমাত্র ফসল—বোরো ধান। এই অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও প্রতিবছরের বন্যা ও প্লাবন আমাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের বোরো ধান প্রায়ই নদীভাঙন বা অপরিকল্পিত বাঁধ ব্যবস্থার কারণে বিনষ্ট হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজও কোনো স্থায়ী ও কার্যকর বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যা দেওয়া হয়, তা শুধুই অস্থায়ী এবং দুর্বল মানের। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো সুপরিকল্পিত স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। অন্যদিকে, আমাদের অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বালু, পাথর, কয়লা, চুনাপাথরের মতো খনিজ সম্পদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ এসব সম্পদকে রাজস্বে রূপান্তর করার বদলে এখানে চলছে নিলামের নামে লুটপাট, চাঁদাবাজি আর দলীয়করণ। এর ফলে জাতীয় রাজস্ব যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় মানুষও তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আমি মনে করি, এই পরিস্থিতি বদলানো দরকার। যদি আমি সুযোগ পাই, তবে আমার লক্ষ্য থাকবে সুনামগঞ্জের অবকাঠামোগত উন্নয়ন—বিশেষ করে জেলা সদরের পৌরসভা থেকে শুরু করে প্রতিটি থানার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আমাদের সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বাজার ও জনসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন আধুনিক ও টেকসই হয়, সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করতে চাই। তাছাড়া, খনিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমি চাই একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছ ও আইনসম্মত কাঠামো গড়ে তোলা হোক, যাতে সকলের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয় এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব বাড়ে। জনগণের কল্যাণে আমার এই প্রতিজ্ঞা অটুট থাকবে—এই অঞ্চলের মানুষ যেন উন্নয়ন ও অধিকার থেকে আর বঞ্চিত না হয়।

এশিয়ান পোস্টঃ আপনি কেণ নির্বাচনে দাঁড়াবেন বলে মনস্থির করলেন?

 হাসেন পাঠান বাচ্চুঃ আমি ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করেছি, আমাদের এলাকার রাজনীতিতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে। তাদের রাজনৈতিক চর্চা, পরিকল্পনা, নেতৃত্ব—সবকিছু যেন একটি নির্দিষ্ট ছকে আটকে আছে, যেটা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়নি। শহরের রাজনীতিকে তারা অনেকটাই নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছে। ফলে, আধুনিক নগরায়ন, সাধারণ মানুষের অধিকার কিংবা নতুন নেতৃত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

আমাদের সুনামগঞ্জে ছয়টি সংসদীয় আসন থাকলেও, লক্ষণীয় বিষয় হলো—যারা অতীতে এমপি হয়েছেন, তারা অধিকাংশই স্থানীয় শহর থেকে না উঠে এসে অন্য জেলা বা উপজেলার বাসিন্দা। যেমন, হুইপ আছিয়া সাব মৌলভীবাজার থেকে, মেজর (অব.) ইকবাল মাটিয়া পাড়ার হোস্টেল থেকে উঠে আসা, মতিউর রহমান নেত্রকোনা থেকে আসা। তাঁরা এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলেন ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব কখনোই হয় না।ফলে আমাদের এলাকার প্রকৃত বাসিন্দারা, যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য মনোনয়ন পাওয়া বা নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমিও একজন স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে মনে করি, এই বৈষম্যের অবসান হওয়া উচিত। আমি যদি সুযোগ পাই, তবে আমি চেষ্টা করব সুনামগঞ্জের প্রকৃত স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে তাদের রাজনৈতিক অধিকার, নেতৃত্বে অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্মানজনক অবস্থান পায়—সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে। আমি জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতে একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই।

 

এশিয়ান পোস্ট/আরজে


এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর