অনলাইন ডেস্কঃ
ইউরোপজুড়ে আবারও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ২০টির বেশি দেশে মুরগি, হাঁস, রাজহাঁস ও অন্যান্য পাখির মধ্যে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পোলট্রি খামারগুলো লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাখিজনিত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) খাদ্যনিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, এ বছর শীত শুরুর আগেই বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে গেছে। শুধুমাত্র ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড ও ইতালিতেই লাখ লাখ পাখি নিধন করা হয়েছে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে। ফ্রান্সে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪০টিরও বেশি বড় পোলট্রি ফার্ম সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্য পাখিরা প্রতি বছর পরিযানের সময় দীর্ঘ দূরত্বে উড়ে যায় এবং তাদের মাধ্যমেই ভাইরাসটি এক দেশ থেকে আরেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়ায় ভাইরাসের সংক্রমণ আরও সহজ হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের কৃষি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই মুহূর্তে দেশজুড়ে সব ধরনের বাণিজ্যিক খামারকে কঠোর জৈবনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি ছোট খামারগুলোকেও পাখি আলাদা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
নেদারল্যান্ডসে এক সপ্তাহের মধ্যে ৭টি বড় খামারে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্ত সব খামারেই লাখ লাখ মুরগি নিধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশটির কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা চাই না ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি ফিরে আসুক, যখন কোটি পাখি মারা গিয়েছিল।”
ইতালির উত্তরাঞ্চলেও একই পরিস্থিতি। সেখানে কয়েকটি বাণিজ্যিক খামারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটি এখন এমনভাবে ছড়াচ্ছে যে, স্থানীয় প্রশাসন জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপে পোলট্রি শিল্পের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০ বিলিয়ন ইউরো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই শিল্পে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু ব্যবসা নয়, খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
পোলট্রি মাংস ও ডিমের ঘাটতির কারণে ইউরোপের বাজারে ইতিমধ্যে মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়ছে।
ইউরোপীয় স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এখনো পর্যন্ত বার্ড ফ্লু মূলত পাখির মধ্যেই সীমিত থাকলেও ভাইরাসটির রূপান্তর (mutation) হলে তা মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। এর আগেও কয়েকটি দেশে সীমিত মানব সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলেছে, এই পরিস্থিতি “অত্যন্ত উদ্বেগজনক”। সংস্থার মুখপাত্র বলেন, “আমরা ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি যেন ভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।”
চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও একই ধরনের সতর্কতা জারি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এশিয়া ও আফ্রিকার অভিবাসী পাখির মাধ্যমে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের প্রাদুর্ভাব কেবল পোলট্রি শিল্প নয়, সামগ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলবে। ইউরোপজুড়ে প্রাণিসম্পদ খাতে নতুন করে মহামারির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এশিয়ানপোস্ট / এফআরজে