আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ হামলার ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন গাড়িচালক রয়েছেন। হামলার ঘটনাটি দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি জানিয়েছেন, খাইবার পাখতুনখাওয়ার কারাক জেলায় এই হামলা সংঘটিত হয়। প্রাদেশিক পুলিশ প্রশাসনের বরাতে জানানো হয়, একটি গাড়িতে করে পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন শেষে যাচ্ছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে সড়কের নিচে পুঁতে রাখা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গাড়িটি থামিয়ে দেয়। বিস্ফোরণের পরপরই সন্ত্রাসীরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।
গুলিবর্ষণে ঘটনাস্থলেই চার পুলিশ কর্মকর্তা ও গাড়ির চালক নিহত হন। হামলার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বড় একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং হামলাকারীদের ধরতে আশপাশের এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে। তবে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী বা সংগঠন দায় স্বীকার করেনি।
এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকবি বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চরম বর্বরতা ও নির্মমতার বহিঃপ্রকাশ। শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যাবে না। রাষ্ট্র আরও কঠোরভাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং হামলার উপযুক্ত জবাব দেবে।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখসারিতে থেকে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তায় তাদের আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়।”
খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই সহিংসতার জন্য পরিচিত। বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সন্ত্রাসীদের শক্ত অবস্থান রয়েছে এই প্রদেশে। প্রায়ই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা।
টিটিপির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী আশ্রয় এবং পারস্পরিক অভিযোগের কারণে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনী গত মাসে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় সরাসরি বিমান হামলা চালায় বলে জানা গেছে।
সাম্প্রতিক এই হামলা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাস দমনে আরও কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকতে পারে।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড