আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে কি-না তা নিয়ে শুনানি করতে সম্মত হয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বিষয়টি কেন্দ্রীয় গুরুত্ব পেয়েছে কারণ এর প্রভাব পড়ে চলমান অভিবাসন নীতি ও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির ওপর।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই অবৈধভাবে বসবাস করা পিতামাতার সন্তানদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সুবিধা বন্ধ করার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। তবে এটি কয়েকটি নিম্ন আদালতে আটকে যায়। সুপ্রিম কোর্ট এখন বিষয়টি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। শুনানির কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি এবং রায় পেতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী ১৮৬৮ সাল থেকে এই নীতি প্রতিষ্ঠা করেছে যে দেশটিতে জন্ম নিলে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিক হবে। তবে কূটনীতিক ও বিদেশি সামরিক বাহিনীর সন্তানদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা নাগরিকত্ব পাওয়া সব ব্যক্তি এবং এর এখতিয়ারের আওতায় থাকা ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।”
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি ছিলো, ১৪তম সংশোধনীতে ‘সাবজেক্ট টু দ্যা জুরিসডিকশন’ দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে যারা স্থায়ীভাবে অথবা আইনমাফিকভাবে দেশে নেই, তারা এই সংবিধানের আওতায় পড়ে না। প্রশাসন এটিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে দেখেছে।
এ ইস্যুতে মামলা করেছেন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন-এর জাতীয় আইন বিষয়ক পরিচালক সেসিলিয়া ওয়াং, যিনি বলেছেন, কোনো প্রেসিডেন্টই ১৪তম সংশোধনীতে নাগরিকত্বের মৌলিক অধিকার পরিবর্তন করতে পারেন না। ওয়াং জানিয়েছেন, এটি দীর্ঘদিনের জাতীয় প্রথা যে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রতিটি ব্যক্তি জন্মগতভাবে নাগরিক।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সেই ত্রিশটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদান করা হয়। ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালত কয়েকটি রায় দিয়েছে যে এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দুটি আপিল আদালত আদেশ কার্যকর না করার স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে।
সুপ্রিম কোর্টে এই ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এবং নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশের বিরোধিতা চলছে। আদালতের রায় যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি, নাগরিকত্ব সংজ্ঞা এবং ভবিষ্যৎ অভিবাসী শিশুদের ওপর।
জাতীয় গবেষণা সংস্থা দ্য পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখের বাবা-মা বৈধ অভিবাসী ছিলেন না। তবে এই সংখ্যা ২০০৭ সালের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম। ২০২২ সালে অনুমোদনহীন অভিবাসী পিতামাতার সন্তানদের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ। গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল থাকলে ২০৪৫ সালে এই সংখ্যা আরও ২৭ লাখ এবং ২০৭৫ সালে ৫৪ লাখে পৌঁছাবে।