অনলাইন রিপোর্টারঃ
বেসরকারি খাতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম প্রতি মাসে সমন্বয় করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যায় না বলে ভোক্তাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের ভাষ্য, ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে। একই শহরের ভেতরেও এলাকাভেদে দাম ভিন্ন।
গত মঙ্গলবার ডিসেম্বর মাসের জন্য নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। ১২ কেজি সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ টাকা, যা গত নভেম্বরে ছিল ১ হাজার ২১৫ টাকা। প্রতি মাসে এই দাম সমন্বয় করা হলেও ভোক্তা পর্যায়ে নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হচ্ছে না।
১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভার বাসিন্দা কেয়া হোসেন বলেন, প্রতি মাসেই তাঁকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দিতে হয়। নভেম্বরে তিনি ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। বাসায় পৌঁছাতে তাকে আরও ৫০ টাকা দিতে হয়েছে।
ঢাকার কাজীপাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদের অভিজ্ঞতাও একই। তিনি জানান, নভেম্বরে ১২ কেজির সিলিন্ডারের জন্য দিতে হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং ডেলিভারির জন্য আরও ৫০ টাকা। ডিসেম্বরের দাম বৃদ্ধির পর তার মতে খরচ আরও বাড়বে। অন্যদিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা কামরুন্নেছা রুহী গত মাসে একই সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়। অর্থাৎ একই শহরেই দুই ক্রেতার কেনা দামে পার্থক্য দেড় শ টাকা পর্যন্ত।
এলপিজির দাম নির্ধারণে বিইআরসি ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে মাসিক সমন্বয় করছে। দাম নির্ধারণের সূত্র নিয়ে দুই বছর পরিবেশক ও কোম্পানির মধ্যে বিরোধ চলেছিল। পরে কিছু খরচ সূত্রে যুক্ত করায় কোম্পানি পর্যায়ের বাড়তি দামের অভিযোগ কমে আসে। তবে ভোক্তা অভিযোগ এখনো রয়েছে খুচরা পর্যায়ের অনিয়ম নিয়ে।
সারা দেশে এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক সমিতির সভাপতি সেলিম খান বলেন, পরিবেশকদের পর্যায়ে দাম ঠিক আছে। তাদের বাড়তি দামে বিক্রির সুযোগ নেই। খুচরা বিক্রেতারাই দাম বাড়াচ্ছেন, যা বন্ধে ভোক্তা অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযান চালানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।
নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি নিশ্চিতে বাজার নজরদারির সামর্থ্য নেই বিইআরসির। সংস্থাটি বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকদের নজরদারির অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরও মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, তাদের লাইসেন্সিং ক্ষমতা না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। জানুয়ারির মধ্যে সব পরিবেশককে লাইসেন্স নিতে বলা হয়েছে। এরপর খুচরা বিক্রেতাদেরও লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। এতে জবাবদিহি আরও নিশ্চিত হবে।
বিইআরসির নতুন দর অনুযায়ী, বেসরকারি এলপিজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা ৪১ পয়সা, যা গত মাসে ছিল ১০১ টাকা ২৪ পয়সা। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩ টাকা ১৭ পয়সা। সরকারি কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত থাকলেও এর নাগাল পান খুব অল্প সংখ্যক ভোক্তা। বাজারে ৯৯ শতাংশ এলপিজিই বেসরকারি খাতে সরবরাহ হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসি তার আইনি দায়িত্ব পালন করছে না। আইনে যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করে না এবং ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ। এজন্য ক্যাব রাষ্ট্রপতির কাছে বর্তমান কমিশনের অপসারণ দাবি করেছে।