অনলাইন রিপোর্টারঃ
নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি জোরদার হলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল কবে ঘোষণা হবে— তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার বিকেলে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের একটি কর্মশালায় ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতির বিভিন্ন ধাপ দ্রুত এগোচ্ছেও তফসিল ঘোষণার দিন এখনো কমিশন ঠিক করেনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ইসি ডিসেম্বরের শুরুতেই তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।
এবারের নির্বাচন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। এই দুটি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে একটি জাতীয় বৈঠক করে। বৈঠকে তফসিল, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা, মাঠপর্যায়ের কর্মী প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আখতার আহমেদও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয়। তফসিল ঘোষণার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করতে পারে নাই।” তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি শতভাগ রয়েছে।
ইসি সচিব আরও বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য যেন কেউ না ছড়ায় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, “আমি সবাইকে অনুরোধ করি, সঠিক তথ্যটা দেন। নির্বাচন নিয়ে জোর প্রস্তুতি চলছে— এটা নিশ্চিত।” সাংবাদিকরা যাতে নির্বাচনী আইন, বিধিমালা ও কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পান, সে জন্য আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সর্বশেষ সংশোধনীসহ)’, ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা, ২০০৮’, এবং ‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ আয়োজন করে ইউএনডিপি ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।
দিনের শুরুতে কর্মশালার এক পৃথক অধিবেশনে নির্বাচন কমিশনার আবদুল রহমানেল মাছউদ যুক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব, নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রযোজ্য আইন— সিআরপিসি, সিপিসি, অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট— এবং নির্বাচনসংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনও এখন তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠপর্যায়ে প্রচারণা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালালেও চূড়ান্ত তফসিল ঘোষণার পরই নির্বাচনী উত্তাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইসির কর্মকর্তাদের মতে, যেহেতু নির্বাচনের দুটি ধাপ— জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট— একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে, তাই প্রস্তুতি আরও বিস্তৃত এবং সময়সাপেক্ষ। তফসিল ঘোষণার সময় নির্ধারণে সব দিক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলেও কমিশনের সূত্র জানিয়েছে।