প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশে অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকিংসদৃশ কার্যক্রম চালিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে দ্য ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক (ডিএমসি ব্যাংক)–এর বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট মহলের কিছু নীতি-নির্ধারক ও কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে আইন লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতার দ্বিতীয় পর্বে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ‘হায় হায় কোম্পানি’ নামে পরিচিত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। ইউনি পে টু ইউ, ভিশন–২০২০–এর মতো এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মানুষ নিঃস্ব হওয়ার অভিজ্ঞতা এখনও তাজা। তেমনিভাবে ডিএমসি ব্যাংককেও অনিয়ম করে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, ডিএমসি ব্যাংক একটি ‘হায় হায় কোম্পানি’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে এবং গ্রাহকদের উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করার পর তা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে তার অভিযোগ। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে বাধা এড়াতে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হয়।
আদালতসূত্রে পাওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু জাফর চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তাকে কেন্দ্র করে বলা হয় যে, সাধারণ মানুষের অর্থ ব্যবহার করে তিনি বিদেশে সম্পদ গড়ে তুলেছেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সাংবাদিকরা একাধিকবার যোগাযোগ করলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমানসহ কিছু অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ডিএমসি ব্যাংকের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকর্তাদের উচ্চ বেতন, গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রভাবশালী চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় ‘ম্যানেজমেন্ট’ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগও উঠে এসেছে।
ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে অবৈধভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা হয়। এমনকি নিয়মিত ‘মাসোয়ারা’ দেওয়ার অভিযোগও তিনি তুলে ধরেন। তার মতে, এ সকল অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, ডিএমসি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে। কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বড় ধরনের হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসার কথাও অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন। তবে এসব বিষয়ে ডিএমসি ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এশিয়ানপোস্ট / এফআরজে