আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে নিয়ে উচ্চ প্রশংসা করেছেন। নিউইয়র্কের নেতৃত্বে মামদানি অসাধারণ দক্ষতা দেখাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন আমি বিশ্বাস করি, মামদানি তাঁর দায়িত্ব অত্যন্ত ভালোভাবে পালন করবেন। এমনকি তাঁর পারফরম্যান্স অনেক রক্ষণশীলকেও অবাক করবে।”
গত ৫ নভেম্বর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি ৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হন। আগামী ১ জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। শপথের পর ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন।
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন এবং রিপাবলিকান পার্টি মামদানির বিরোধিতায় ব্যাপক প্রচারণা চালায়। ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবেও তাঁকে ‘কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, মামদানি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্কের জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থ আটকে দেওয়া হবে। প্রচারণা চালাতে ট্রাম্প প্রশাসন ও রিপাবলিকান পার্টি ২৪০ কোটি ডলার ব্যয় করে।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর ট্রাম্পের ভাষায় ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর। তিনি বলেন, “অনেক ইস্যুতে আমি ভাবিনি যে এতটা মিল পাব, কিন্তু পেয়েছি। আমাদের দু’জনের মিল— আমরা নিউইয়র্ক সিটিকে ভালোবাসি এবং এই শহরের সার্বিক উন্নতি চাই।”
বৈঠকের পর জোহরান মামদানি সাংবাদিকদের বলেন, “নিউইয়র্ক সিটি ও সেখানকার মানুষের বাস্তব সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বৈঠকটি ছিল ফলপ্রসূ, সম্মানপূর্ণ এবং অত্যন্ত ইতিবাচক।”
মেয়র নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর নিউইয়র্কজুড়ে উদযাপন হয়। তরুণ প্রজন্ম, অভিবাসী সম্প্রদায় এবং মুসলিম আমেরিকান সমাজ বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত। তাঁদের আশা, মামদানির নেতৃত্বে বাসস্থান সংকট, গণপরিবহন, জননিরাপত্তা, বৈষম্য দূরীকরণসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাস্তবসম্মত সমাধান আসবে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন একটি বড় রাজনৈতিক সংকেত। নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের মেয়রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য কৌশলগত দিক থেকেও জরুরি। বিশেষ করে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এই নমনীয়তা রিপাবলিকানদের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
জোহরান মামদানি আফ্রিকান জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনি। রাজনীতিতে আসার আগে তিনি ছিলেন কমিউনিটি অর্গানাইজার। নিউইয়র্ক সিটির শ্রমজীবী ও অভিবাসী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার মূল প্রতিশ্রুতি ছিল— সাশ্রয়ী বাসস্থান, নিরাপদ গণপরিবহন, পুলিশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো— শহরের বাজেট ঘাটতি কমানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা এবং অভিবাসন সংকট মোকাবিলা। তবু তরুণ ও নতুন প্রজন্ম তাঁকে ঘিরে ব্যাপক আশাবাদী।
সূত্র : আরটি