আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারতের পাঁচটি প্রধান শহর—কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরু—জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বহুতল ভবনের চাপে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। পরিবেশবিদ এবং গবেষকরা নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করে জানিয়েছেন, আগামী ৫০ বছরে এসব শহরের হাজার হাজার বহুতল ভবন মাটির নিচে বসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভার্জিনিয়া টেক ও ইউনাইটেড নেশনস ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে এই পাঁচটি মহানগরের ৮৭৮ কিলোমিটার এলাকায় মাটি ভঙ্গুর হয়ে গেছে। মূল কারণ হল ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং বর্ধিত নির্মাণ কাজ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের কারণে গ্রাম থেকে মহানগরের দিকে মানুষের আগমন বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে বাড়ি-বাড়ি নির্মাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত শহরের বাইরে পর্যন্ত। একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলন, অন্যদিকে নির্মাণের ভারে মাটি বসতে শুরু করেছে। কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মাটি চার মিলিমিটার পর্যন্ত নেমে গিয়েছে।
২০১৯ সালে কলকাতার বউবাজার এলাকায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সুড়ঙ্গ কাটার সময় বড় ধস পড়ে, যা মাটির নিচে পানিস্তর সরে যাওয়ার কারণে হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকাতার মাটি এমন যে, এখানে ১০ তলার বেশি উঁচু ভবন হওয়া উচিত নয়। মাটির নিচের স্তর ঝুরঝুরে ও দুর্বল হওয়ায় বড় বড় ভবনের নিচে মাটি বসে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। শহরের পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি বেশি করে তোলা হচ্ছে, যা মাটির ভারসাম্য নষ্ট করছে।
ক্যালকাটা পৌরসভা ইতোমধ্যে ৩০০টির মতো বিপজ্জনক বাড়ি চিহ্নিত করেছে, যেগুলো মাটির অসন্তুলনের কারণে ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন, বহু উঁচু বহুতল নির্মাণ ও অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ পানির পুনরায় সরবরাহ (রিচার্জ) এবং ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। কলকাতার মতো শহরে পানির সরবরাহ সীমিত থাকলে ভবিষ্যতে নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ভূমিকম্পের ঝুঁকিও কলকাতায় বাড়ছে, তাই দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলা জরুরি।
সরকারি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, কলকাতা ও অন্যান্য মহানগর শহরের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন হবে।