এশিয়ান পোস্ট ডেস্কঃ
———————————————————————————————————————————————————————
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুই দলের ছাত্রনেতার
প্রভাব ও দখলদারিতে অতিষ্ঠ জনজীবন;
প্রশাসনের নীরবতায় বাড়ছে সহিংসতা
ফরিদপুরে ছাত্রদল ও আওয়ামী লীগের দুই নেতা — মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম মল্লিক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম মল্লিক — মিলে গড়ে তুলেছেন ত্রাসের রাজত্ব। রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে তারা এখন একে অপরের অপকর্মের সহযোগী। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের নেতৃত্বে দখল, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রশাসনের নীরবতা ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এলাকাবাসী একপ্রকার জিম্মি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
সময় কার কখন অনুকূলে আসে আর কখন কার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় জুলাই আন্দোলনের পরে সেটা উপলব্ধি করে চলছে ফরিদপুর সদর ২৬’ ২৭ নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন বাসী।এই এলাকাগুলোতে বিএনপি, আ’লীগ নেতা মিলে গড়ে তুলেছে ক্রাশের রাজত্ব।
অনুসন্ধান দেখা যায়,ফরিদপুর মহানগর বিএনপির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম মল্লিক ও ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ সেলিম মল্লিক বর্তমান একে উপরের অপকর্মের সহযোদ্ধা। এই দুইজনের বডিগার্ড সহ অপকর্মের প্লান মাষ্টার হিসাবে সাথে রয়েছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ক্রোজের আসামী পান্নু মল্লিক, কিশোর গ্যাংয়ের লেডার ও মারামারি, হানাহানির নেত্রীতকারী ফজল মল্লিক, এবং সাদ্দামের নারী ও মাদক ব্যবসায়ীর দেখবাল করা ব্যক্তিগত সহচর ওবাইদুল মল্লিক।
স্থানীয় ভাবে একাধিক সূত্রে জানা যায়, শান্তি প্রিয় এলাকাটি বর্তমান অশান্তিতে পরিনত হয়েছে। এলাকাবাসী এক প্রকার জিম্মি দশায় জীবন যাবন পার করছে সাদ্দাম,সেলিম সহ তাদের লোকজনের কাছে।
অভিযোগ আছে, দখলবাজি,চাঁদাবাজি,বাড়িঘর ভাঙ্গচুর, জুয়ার আসর,মাদকের আসর, ভয়ভীতি দেখি অর্থ আত্মসাৎ, অফিস নামে গোপন ঘরে মানুষকে আটকিয়ে নির্যাতন, সালিশ বানিজ্য সহ নানা রকেমর অপকর্মের।
এলাকায় এতো কিছু সব অপকর্ম করার পরেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আর করবেই না বা কেন এদের ভয়ে আতঙ্কে মানুষ অভিযোগ, প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা কেউ মুখ খুলতে সাহস পাইনা। কারণ প্রশাসন এসে সাদ্দামের টর্চারসেল নামক অফিস এনে স্বজন প্রীতির খেলায় মেতে থাকে।আর সেটা দেখে জনসাধারণ মনে আরও আতঙ্ক তৈরী হয়।
(সাদ্দাম বাহিনীর কিছু অপকর্ম তুলে ধরা হলো)
হিন্দু থেকে মুসলমানরা কেউ এই সাদ্দাম সহ তার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে প্রথমে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে জনসাধারণের মনে ভয় ডুকানো। কাফুরা হিন্দু পরিবার বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা সহ চাঁদা দাবি,হিন্দুদের নির্যাতন সহ জরিমানা আদায়ের নামে চাঁদা নেয়া, নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ রহিমের উপর অমানসিক ভাবে নির্যাতন করা, অন্যয়ের প্রতিবাদ করায় চান্দা ডাক্তারের ছেলে এলোর উপরে হামলা করা, মুন্সিবাজারের সভাপতি ও স্থানীয় মাতুব্বর উপরের নির্যাতন করা, বাজার দোকানপাট দখল করা। আওয়ামী লীগের নেতার হুমকি দামকি দিয়ে বড় বড় অংকের চাঁদা নেয়া। অভিযোগ আছে গেরদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ এমার হক চাঁদা না দেয়ায় তার বাড়িতে আগুন সহ লুট করা।
শুধু তাই নয় ২৬’২৭ নং ওয়ার্ড সহ দশ এলাকার ঐতিহাসিক মুন্সীবাজার বর্তমান সাদ্দামের দখলে প্রতিদিন চলে ইজারা নামে চাঁদাবাজি,কাফুড়া কুমার নদী পারে ঘেয়াঘাট বাজারের পাশে রয়েছে ফরিদপুর জেলার মধ্যে সব চেয়ে বড় রমরমা জুয়ার আসর ও মাদকের ব্যবসা সাদ্দামের নেতৃত্বে। কাফুড়া গ্রামে মাঝিপাড়া হিন্দু পরিবারের উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন চাঁদাবাজি, ভয় আতঙ্কে কোনঠাশা হিন্দুপট্টি। সাদ্দামের চাঁদাবাজির সব চেয়ে বড় কৌশল টাকা ওয়ালা ব্যক্তিদের আ’লীগের ট্যাগ লাগিয়ে লাগিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
সাদ্দাম তার সঙ্গে থাকা বাহিনীকে আলাদা আলাদা কর্মকান্ড ভাবে ভাগ করে দিয়েছে। সেলিম মল্লিকরের দাযিত্ব সালিশ বানিজ্য ও জুয়ার আসর দেখভাল করা। পান্নু মল্লিকের দায়িত্ব অসহায় নিরীহ পরিবার সহ মানুষের কৌশলে ফান্দে আটকিয়ে নির্যাতন করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া সহ মাদক ব্যবসা দেখভাল ও জনগণকে আতঙ্কে রাখা। ফজল মল্লিকের দায়িত্ব হাটবাজার, দোকান থেকে চাঁদা কালেকশনসহ মিনিং মিছিল কিশোর গ্যাং ধারা পরিচালনা করা। এবং ওবাইদুল মল্লিকের দায়িত্ব সাদ্দামের ফরিদপুর শহর জুড়ে যতগুলো বাসা,বাড়ি ফ্লাট রয়েছে ভাড়া করা সেখানে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা সহ মাদক সরবরহ করা। হুমকি দামকি সহ বড় বড় কাজের চাঁদার টাকা সরবরাহ করা। সাদ্দাম নিজেকে সবার কাছে ছাত্র পরিচয় দিয়ে থাকে অথচ একটি ছাত্র কোটি কোটি টাকার মালিক হয় কি ভাবে প্রশ্ন সাধারণ জনসাধারণের।
অনুসন্ধনে বের হয়ে আসে আরও চঞ্চলকর তথ্য এই সাব্বির হোসেন সাদ্দাম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের বড় একটি ক্ষমতাধর ব্যক্তির হয়ে কাজ করতেন এবং তাকে হাতে রেখে বিভিন্ন অপকর্ম করে চলতো। তার পিতা সোহরাব মল্লিক ছিলেন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়নের বড় নেতা। সাদ্দাম মাদক মামলা সহ নারী কেলেঙ্কারি মামলায় একাধিক বার কারাবাস খেটেছে। অথচ এলাকা সহ রাজনৈতিক নেতারা জানে রাজনৈতিক ভাবে নির্যাতন শিকারের হয়েছে।ফরিদপুর ভাঙ্গা থানার এলাকার এক কোটিপতির মেয়েকে ফাঁদে তুলে নিয়ে বিবাহ করেছে।
সাদ্দামের রাজনীতি হাতেগড়ি মহানগর বিএনপির যুবদলের সভাপতি, সাবেক ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরিজ হাত ধরে। তবে তার নেতাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমান সাদ্দাম বিএনপির বড় বড় নেতাদের ছায়াতলে থাকার জন্য দৌড়ে ঝাপ চালাচ্ছে।
এলাকাবাসীর জানায়, আগে আওয়ামী লীগের নেতার ছিল তবে এই রকম জুলুম অত্যাচার তারা কখনোই করে নাই। সাদ্দামসহ তার বাহিনী যা শুরু করছে জনগণ তো ঘরে বাইরে থাকাটা নিরুপায় হয়ে পড়েছে। এখনোও তো বিএনপি ক্ষমতা আসে নাই তাতেই এই অবস্থা আর ক্ষমতায় পেলে কি করবে আল্লা মাহবুদ জানে। আমার আইন প্রশাসন থেকে শুরু করে বিএনপির উদ্যেতম নেতাদের কাছে দাবি জানায় এই সাদ্দাম সহ তার বাহিনীর বন্দিদশা থেকে এলাকার মানুষদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক। এদের কে অতি শীর্ঘ আইনের আওতায় নেয়া হোক। এবং আমরা এলাকাবাসী স্বাধীন ভাবে জীবন যাবন করার পাশাপাশি শান্তি শৃঙ্খলা ভাবে বসবাস করতে পারি সেই ব্যবস্থা করা হোক।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর মহানগর বিএনপির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম মল্লিক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই। একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ভাই স্টুডেন্ট বিনা কারণে কেন আমি মানুষকে নির্যাতন করব। কেউ যদি অন্যায় করে তার জন্য তো প্রশাসন আছে। আমি কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিব। নানান রকম কথার এক পর্যায়ে সে সাংবাদিককে টাকা-পয়সার অফার করে। এখন প্রশ্ন হল সে যদি কোন অন্যায় কাজে নিয়োজিত না থাকে তাহলে কেন সাংবাদিককে টাকার অফার করল।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী মহিলা দল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক ও ফরিদপুর ৩ আসনের গণমানুষের নেত্রী চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ফরিদপুর মহানগর বিএনপির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন সাদ্দাম মল্লিক এর ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সৈয়দ মোদাররেস আলী ইশা বলেন, আমি তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি কিন্তু তারা এ ধরনের কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছে কিনা সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নাই। তিনি আরো বলেন কোন নেতা কি দিয়ে ভাত খাচ্ছে শাক দিয়ে ভাত খাচ্ছে না মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছে নাকি মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছে সেটা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তার বিরুদ্ধে দখলবাজি,চাঁদাবাজি,বাড়িঘর ভাঙ্গচুর, জুয়ার আসর,মাদকের আসর, ভয়ভীতি দেখি অর্থ আত্মসাৎ, গোপন ঘরে মানুষকে আটকিয়ে নির্যাতনসহ সালিশ বানিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন আমাদের দলের প্রধান অর্থাৎ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। কেউ যদি কোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির চাঁদাবাদীর সঙ্গে জড়িত থাকে এবং সেটা প্রমাণ হয় তাহলে আমাদের নেতার নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এশিয়ান পোস্ট/আরজে