দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পাহাড়, টিলা আর চা বাগানে ঘেরা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-২ আসনেও বইতে শুরু করেছে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ করছেন। মনোনয়ন চেষ্টায় দলের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
কুলাউড়া-২ আসনে বিএনপির অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে নজর কেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট বিএনপির সভাপতি সৈয়দ জুবায়ের আলী। মাঠ পর্যারয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি করার পাশাপাশি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। পরবর্তীতে দীর্ঘ প্রবাস জীবনে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছেন। পাশাপাশি নিজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থাকা, নানা মানবিক কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাতে সৈয়দ জুবায়ের আলী মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সেবার দল যাকে বেছে নিয়েছিলো তাঁর জন্যেই কাজ করেছেন তিনি। এবারও তিনি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের দাবিদার। দলীয় পরিচয়ের বাইরেও নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি নেতৃত্ব দেন সৈয়দ জুবায়ের আলী। বিশেষ করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে দেশে যখন নেতাকর্মীরা পুরোপুরি কোনঠাসা তখন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাছে সরকারের নানান অপকর্ম পৌঁছে দিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সরাসরি মাঠে থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। যে আন্দোলনের এক পর্যায়ে দেশে গণঅভুত্থানের সৃষ্টি হলে শেখ হাসিনার পতন হয়।
কুলাউড়া এলাকায় প্রচুর মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রয়েছে। এত সম্ভাবনার পরেও এই এলাকাটি আজও অবহেলিত, উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত, যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় এতদিনেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। তাই কুলাউড়াকে আধুনিক ও উন্নয়ন অগ্রগতির দিক দিয়ে এগিয়ে নিতে সৎ-সাহসী একজন সংসদ সদস্য দরকার। তাই এলাকার নানা শ্রেণি পেশার মানুষেরও দাবি, নেতৃত্বে আসুক সৈয়দ জুবায়ের আলী।
রাজনীতির বাইরেও একজন মানবিক জুবায়ের আলী
কুলাউড়া-২ সংসদীয় আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ জুবায়ের আলী নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা। ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিক যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট (উত্তর ইউএসএ) বিএনপির দীর্ঘদিনের সভাপতি। দায়িত্ব পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতির। এছাড়া বহির্বিশ্ব জাতীয়তাবাদী ফোরামের (কুলাউড়া উপজেলা) সাধারণ সম্পাদক। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির উপদেষ্টাও সৈয়দ জুবায়ের আলী। মৌলভীবাজার জেলা অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি, নিউ জার্সির শাহজালাল লতিফিয়া ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি সৈয়দ জুবায়ের আলী।
শুধু প্রবাসেই নন, জুবায়ের আলী দেশের রাজনীতিতেও তার অংশগ্রহণ আছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা মাধ্যমে করছেন মানবিক কাজও। কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা জুবায়ের আলী দায়িত্ব পালন করেছেন কুলাউড়া উপজেলা ও কুলাউড়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হিসেবে।
দেশে ও প্রবাসে বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। স্বনামধন্য আলেম মাওলানা শাহ সৈয়দ রাসিদ আলী (রাহ.)-এর সন্তান সৈয়দ জুবায়ের আলী তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। আর্তমানবতার সেবায় ফাউন্ডেশনটি নানা ধরণের কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। বাবার নামের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এরইমধ্যে কুলাউড়ায় অসহায় মানুষকে প্রায় অর্ধশতাধিক পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। এছাড়াও শাহ সৈয়দ রাসিদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লংলা রাশিদিয়া শমশেরিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, জকিয়া বেগম এতিমখানা ও ছাত্রাবাস নির্মাণ করেছেন এই রাজনীতিক।
নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে যা বললেন জুবায়ের আলী
আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ জুবায়ের আলী বলেন, আমি তৃনমূল নিয়ে গড়ে ওঠা একজন বিএনপি কর্মী। আমি ছাত্রদলের পাশাপাশি যুবদল, মূল দলের সঙ্গে তৃনমূলে কাজ করেছি।
জুবায়ের আলী বলেন, ‘১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আসার পর থেকে ব্যক্তি, পারিবারিক জীবনের বাইরেও দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি’। তিনি জানান, ‘প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে এখানে নিয়ে এসে প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর সমস্যা সমাধানে সোনালী এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেছি। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের মাধ্যমে কনস্যুলার স্থাপনের কাজ করেছি’। বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষের জন্য কাজ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিও বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে যখন যে সুযোগ পেয়েছি মানুষের সেবা করার চেষ্টা করেছি। দেশে থাকি কিংবা প্রবাসে থাকি আমৃত্যু এই কাজ করে যেতে চাই’।
জুবায়ের আলী বলেন, ‘যারা রাজনীতি করে তাদের জীবনের একটি টার্গেট থাকে। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চায়। তবে অবাক করা বিষয় হলো আমার এলাকার নানা শ্রেণি পেশার মানুষ, নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্খীরা হাইকমান্ডের কাছে আমাকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার জন্য দাবি করছেন। সেই থেকে আমি চিন্তা করছি দল যদি সুযোগ দেয় আমি অবশ্যই নির্বাচন করতে চাই’।
মানুষ কেন আপনাকে ভোট দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মানুষ ভালো লোককে নির্বাচিত করতে চায়। আমি বড় কোনো পদপদবীতে না থাকলেও মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি’। বর্হিবিশ্বে থাকা নেতাকর্মীদের মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন এই রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘নির্যাতিতদের বিপদে এখানকার নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি যদি নির্বাচন নাও করি তারপরও মানুষের জন্য যে কাজ সেগুলো আমরা চলমান রাখবো’।
নির্বাচিত হলে এলাকার জন্য কি করার প্রতিশ্রুতি থাকবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি দল মনোনয়ন দেয় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব পাই তাহলে অবহেলিত কুলাউড়াকে একটি আধুনিক, মডেল উপজেলায় পরিণত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনেও নিজের মেধা, শ্রম দিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি থাকবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১দফা বাস্তবায়নে নিরলস চেষ্টা করবো’।