বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ :
Eid Bazar ! Eid Bazar ! Held on 30th March Saturday @ Paterson Firemanhall, Adress 226 Walnut ST, Paterson, NJ 07522 /  9th International Women's Day Award Held on April 27, 2024 @ The Brownston, 251 West Broadway, Paterson, NJ .7522 Ticket 70 Dollar Per Person Get Tickets From www.eventbrite.com

শ্রমিক থেকে যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

রিপোর্টার / ৯ বার
আপডেটের সময় : বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন
শ্রমিক থেকে যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

দক্ষিণ কোরিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী লি জে মিয়ং। তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এবং মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য কিম মুন-সুকে হারিয়ে এই বিজয় লাভ করেন। গত বছরের ৩ ডিসেম্বরের ঘটনার আগে লি জে মিয়ংয়ের ক্ষমতায় আসার পথে ছিল নানা বাধা ও জটিলতা। চলমান একাধিক মামলার পাশাপাশি দুর্নীতির অভিযোগ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তদন্তে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতাই বাতিল হতে যাচ্ছিল। তখনই একটি সাংবিধানিক সংকট বদলে দিয়েছে সবকিছু।

সেই রাতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইউল সামরিক শাসন জারির ব্যর্থ চেষ্টাই নতুন এক রাজনৈতিক গতিপথ তৈরি করে দেয়। যা লিকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে প্রশস্ত করে।

ঠিক এর ছয় মাস পর, দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ বিজয়ী করে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী লিকে। কিশোর বয়সে ছিলেন একজন শ্রমিক, সেখান থেকে এখন পৌঁছেছেন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে। নির্বাচনের আগেই জনমত জরিপে লির এগিয়ে থাকার ইঙ্গিত ছিল। আর নির্বাচনের দিন ভোরেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করে নেওয়ায়, লির সামনে থাকা শেষ বাধাটিও কেটে যায়।

গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা কিন্তু কট্টর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে লি জে-মিয়ং দক্ষিণ কোরিয়ায় এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্বেও পরিচিতি পেয়েছিলেন।

ইনচনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লি জুন-হান বিবিসিকে বলেন, লি জে মিয়ংয়ের জীবনে ছিল উত্থান-পতনের নানা গল্প। তার অনেক পদক্ষেপই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।

তিনি বলেন, লি প্রায়ই প্রগতিশীল সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিতেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের নির্বাচনে সার্বজনীন মৌলিক আয়ের প্রতিশ্রুতি সেই সময়ের দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এই কারণে কেউ কেউ তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, আবার অনেকে তাকে অবিশ্বাস বা অপছন্দ করে।

‘‘তিনি একজন অত্যন্ত বিতর্কিত এবং লোকজন তাকে খুব একটা চিনতোও না। একজন বহিরাগত হয়েও নিজের নামটা এমনভাবে তৈরি করেছেন যা ঐতিহ্যবাহী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রীতিনীতির সাথে খাপ খায় না।’’

তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কিছুটা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বড় ব্যবসা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনাকেও সামনে এনেছিলেন। সাম্প্রতিক এক স্মৃতিকথায়, লি তার করুণ শৈশবের কথাও তুলে ধরেছিলেন।

 

১৯৬৩ সালে গিয়ংবুক প্রদেশের আন্দংয়ের একটি পাহাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন লি। পরিবারের কঠিন পরিস্থিতির কারণে অবৈধ হলেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছেড়েছিলেন।

তখন কিশোর বয়সে একটি কারখানায় কাজ করার সময় একটি মেশিনে হাত চেপে গুরুতর আঘাত পান এবং তার হাতের কব্জি ভেঙে যায়। পরে লি আবেদন করেন এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বসার অনুমতি পান। ১৯৭৮ ও ১৯৮০ সালে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে আইন বিষয়ে পড়ে ১৯৮৬ সালে বার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। ১৯৯২ সালে তিনি কিম হে-কিয়ংকে বিয়ে করেন, তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে।

প্রায় দুই দশক মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর ২০০৫ সালে তিনি রাজনীতিতে আসেন এবং মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন। পরে তিনি সামাজিক-উদারপন্থী উরি পার্টিতে যোগ দেন। যা ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির পূর্বসূরি এবং সে সময়কার ক্ষমতাসীন দল।

তার দারিদ্র্যপীড়িত অতীত জীবনের কারণে তাকে অনেক কটাক্ষ শুনতে হলেও তিনি পিছপা হননি। বরং সাধারণ ও বঞ্চিত মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। ২০১০ সালে তিনি সিওংনামের মেয়র নির্বাচিত হন এবং বিনামূল্যে কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করেন। ২০১৮ সালে বৃহত্তর গিয়ংগি প্রদেশের গভর্নর হন।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় তিনি সর্বজনীন সহায়তা প্রদানের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বেশ আলোচিত হন। ওই সময়েই তিনি ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। যদিও ০.৭৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এক বছরেরও কম সময় পরে, ২০২২ সালের আগস্টে, তিনি দলের নেতা নির্বাচিত হন।

অধ্যাপক ড. লি জুন-হান বলেন, তখন থেকেই আগের চেয়ে আরও সতর্ক অবস্থান নেন লি। আগের মতো কট্টর নয়, বরং কিছুটা নিরাপদ কৌশলও অবলম্বন করেন। তাকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক বিতর্কও ছিল। ২০০৪ সালের মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, আত্মীয়দের সঙ্গে বিরোধ, ২০১৮ সালে পরকীয়ার অভিযোগ ছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার মতো তুলনামূলক রক্ষণশীল দেশে এ ধরনের বিতর্ক যে কারও জন্য বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কেলেঙ্কারির মাত্রা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লি জে মিয়ংয়ের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে চলমান একাধিক আইনি মামলা ও নানা কারণে ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়।

 

এই মামলাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ২০২৩ সালের একটি জমি উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি, ঘুষ এবং বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ। আরেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিল, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্ক চলাকালীন সময়ে লি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিভিশনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রচারিত সেই বিতর্কে লি জোর দিয়ে বলেন, তিনি কিম মুন-কি নামের এক ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না। যিনি ছিলেন দুর্নীতিবাজ জর্জরিত ওই জমি প্রকল্পের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এবং যিনি বিতর্কের কয়েক দিন আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন।

 

অভিযোগ ছিল, লি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। যা দেশটির নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আদালত তাকে এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেয়। পরে মার্চ মাসে আপিল আদালত লিকে ওই অভিযোগ থেকে খালাস দেয়। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ আদালত সেই রায় বাতিল করে।

সংকট থেকেই সুযোগ

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অনেকটা হঠাৎ করে সামরিক আইন ঘোষণা করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি ও উত্তর কোরিয়া সমর্থকদের দমনের অজুহাতে এই সামরিক আইন জারি করা হয়। এরপরই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়।

 

সেই ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অনলাইনে লাইভে এসে লি মানুষকে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হতে বলেন। এতে হাজারো মানুষ সাড়া দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকে প্রবেশ আটকে দেয়। সংসদ সদস্যরা বেড়া টপকে ভবনে প্রবেশ করেন—লি নিজেও ছিলেন তাদের মধ্যে।

 

পরদিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংসদে ইউনের অভিশংসন প্রস্তাব আনে, যা ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল সর্বসম্মতভাবে সাংবিধানিক আদালতে গৃহীতও হয়। ৯ এপ্রিল লি দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দেন। ২৭ এপ্রিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে বিপুল সমর্থনে তিনি দলের প্রার্থী হন।

 

সামরিক শাসনের ব্যর্থ উদ্যোগ দক্ষিণ কোরিয়ায় এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে ও ইউনের রাজনৈতিক পতন ঘটায়, আর রাজনৈতিক দল পিপিপি দল কার্যত ভেঙে পড়ে। এই সংকটে খুব অল্প কয়েকজনই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুবিধা নিতে পেরেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল লি জে-মিয়ং। তিনি এখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে তার ভবিষ্যৎ এখনও আদালতের রায়ের ওপর ঝুলে আছে।

 

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। তবে এখন তিনি ক্ষমতায় থেকেও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া আবারও এক রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। -বিবিসি বাংলা।

 

এশিয়ান পোস্ট/আরজে

 


এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর