অনলাইন রিপোর্টার
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ছয়টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘ চিকিৎসা, দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা এবং পরিবারের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর জানান। দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর শোকের আবহ নেমে আসে। খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েন।
এর আগে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন জানান, খালেদা জিয়া সকাল ছয়টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারেক রহমান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসকরা দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর শারীরিক অবস্থার আর উন্নতি হয়নি।
খালেদা জিয়ার জানাজা আগামীকাল বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। জানাজা ও দাফনের চূড়ান্ত সময়সূচি এবং আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও চলছে।
দীর্ঘদিন ধরেই খালেদা জিয়া নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। তিনি হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি তাঁকে লন্ডনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় তাঁর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলেও বয়সজনিত দুর্বলতা, দীর্ঘদিনের রোগব্যাধি এবং মানসিক চাপ তাঁকে ক্রমশ দুর্বল করে তোলে।
গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটলে তাঁকে শেষবারের মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর এক মাসেরও বেশি সময় তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও এবার তিনি আর চিকিৎসায় সাড়া দিতে পারেননি।
‘দেশনেত্রী’ ও ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধিতে পরিচিত খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। একাধিকবার কারাবরণ, মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিককে হারাল। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও অবদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চিরবিদায় নিলেন তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছ থেকে।