অনলাইন রিপোর্টার
রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এটি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা। অংশগ্রহণকারী অনেকেই জানিয়েছেন, শহীদ হাদির জানাজায় ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
৬৫ বছর বয়সী ধানমন্ডির বাসিন্দা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার জীবনে অনেক জানাজায় অংশ নিয়েছি, কিন্তু এত বড় জানাজা কখনও দেখিনি। শহীদ হাদি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এই কারণে এত মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছে। মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, আমার ৪২ বছরের জীবনে এত বড় জনসমাগম দেখিনি। আমার ধারণা, ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আকিব হাসান বলেন, হাদি ভাইয়ের জানাজায় কত লাখ মানুষ হয়েছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তবে এত মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। সেগুনবাগিচার বাসিন্দা সালাউদ্দিন জানান, আমার ধারণা জানাজায় ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ ছিল।

জানাজার নামাজে বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক ইমামতি করেন। দুপুর ১টার মধ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার দুটি বড় মাঠ মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর মানুষের উপস্থিতি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর বিশাল রাজপথ ধরে ফার্মগেটের খামারবাড়ি ও আসাদগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্তও ছিল মানুষের ঢল।
জানাজার আগে শহীদ হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দিক জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমাদের ছোট ভাইকে হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নয়, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি।”
সকাল থেকেই মানুষ মিছিলসহকারে জানাজায় অংশ নিতে শুরু করেন। কেউ নিজ উদ্যোগে, কেউবা পরিবারের সঙ্গে এবং কেউবা শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা যেন একক বিশাল মিছিলের অংশ হয়ে উঠে।
জানাজার সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনী, ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ মানুষও জানাজায় অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করেন, ‘হাদি ভাই’কে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করার জন্য।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, শহীদ হাদির হত্যার দ্রুত বিচার অত্যন্ত জরুরি। তারা দাবী করছেন, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

জানাজার সময় ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ মানুষ নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। ‘হাদি, হাদি আমরা সবাই হাদি হবো’, ‘বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’—এসব স্লোগান মিছিলকে আরও বেগবান করেছে। তারা আশা প্রকাশ করছেন, শহীদ হাদির হত্যার প্রতিকার দ্রুত হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
শহীদ হাদির জানাজা ওজনান মিছিলে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ এবং দৃঢ় প্রতিবাদের মাধ্যমে স্মরণকালের অন্যতম বড় জনসমাগমের সাক্ষ্য দিয়েছে।