রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২০ অপরাহ্ন
নোটিশ :
Eid Bazar ! Eid Bazar ! Held on 30th March Saturday @ Paterson Firemanhall, Adress 226 Walnut ST, Paterson, NJ 07522 /  9th International Women's Day Award Held on April 27, 2024 @ The Brownston, 251 West Broadway, Paterson, NJ .7522 Ticket 70 Dollar Per Person Get Tickets From www.eventbrite.com

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি কে?

রিপোর্টার / ৩২ বার
আপডেটের সময় : রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২০ অপরাহ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। তিনি শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মেয়র। এছাড়াও, গত ১০০ বছরের মধ্যে তিনি নিউইয়র্কের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র।

মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালা শহরে। সাত বছর বয়সে পরিবার নিয়ে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে আসেন। তিনি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স থেকে পড়াশোনা শেষ করেন এবং পরে বোওডেন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি “স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন” এর ক্যাম্পাস শাখার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি আবাসন খাতের একজন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন, যেখানে তিনি কুইন্সে স্বল্প আয়ের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। মামদানির প্রচারণা অনেকটাই প্রগতিশীল ও বামপন্থী, যেখানে তিনি শহরের উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ কমানো এবং সাশ্রয়ী বাসস্থানের প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি শহরে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সাশ্রয়ী মূল্যে মুদি দোকান চালুর মতো পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন।

তার স্ত্রী রামা দুয়াজি, ব্রুকলিনের সিরিয়ান শিল্পী। বাবা-মা দুইজনই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী; বাবা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি এবং মা মীরা নায়ার একজন চলচ্চিত্র পরিচালক।

মামদানির রাজনৈতিক পথ চলা তৃণমূল পর্যায়ের বড় সমর্থন ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। তিনি তার মুসলিম পরিচয়কে সচেতনভাবে প্রচারণায় তুলে ধরেন এবং সম্প্রতি উর্দু ভাষায় ভিডিও তৈরি করে শহরের মানুষের কাছে পৌঁছেছেন।

তবে তার পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক অবস্থান সব সময় সমালোচিত হয়েছে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা তাকে ‘অদক্ষ’ ও ‘অতি বামপন্থি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অনেকেই তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও মামদানি স্পষ্ট মতামত দিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা কিছু ডেমোক্র্যাটিক নেতাদের সাথে তার মতবিরোধের কারণ হয়েছে।

নিউইয়র্কের মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের কাছে তিনি শক্তিশালী নেতারূপে প্রতিষ্ঠিত। নির্বাচনের পর তিনি বলেন, “নিউইয়র্কের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।”

প্রাথমিক জীবন ও পরিবার

 

জোহরান মামদানি ১৯৯১ সালে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এক সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে পড়া উগান্ডিয়ান বাঙালি অভিবাসী পরিবারের সন্তান। সাত বছর বয়সে তার পরিবার নিউইয়র্কে চলে আসে। নিউইয়র্কে আসার পর তিনি ব্রঙ্কসের একটি পাবলিক স্কুল— ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। তার শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

 

শিক্ষাগত যোগ্যতা

 

মামদানি পরে বোওডেন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে পড়াকালীন সময়ে তিনি “স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন” নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গঠনে সহায়তা করেন, যা প্যালেস্টাইনিদের প্রতি ন্যায় বিচার ও সমর্থন প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক সচেতনতা ও সংগঠনের কাজ শিখেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন

 

মামদানি ব্রুকলিনের সিরিয়ান বংশোদ্ভূত শিল্পী রামা দুয়াজির সাথে বিবাহিত। তাদের পরিচয় হয় একটি ডেটিং অ্যাপে। তার বাবা, অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং মা, মীরা নায়ার একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। উভয়ই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তার পরিবারের পেছনের ঐতিহ্য ও শিক্ষাগত পরিবেশে বড় হওয়া তাকে তার কর্মজীবনে প্রভাবিত করেছে।

 

রাজনৈতিক পথচলা

 

মামদানি রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশের আগে আবাসন খাতে কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। এই সময় তিনি নিউইয়র্কের কুইন্সে স্বল্প আয়ের মানুষের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এখান থেকেই তার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সংগঠক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা শুরু হয়।

 

তার রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্ক শহরের উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ কমানো, সাশ্রয়ী বাসস্থানের প্রসার ও সামাজিক নিরাপত্তার উন্নয়ন। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে হারিয়ে তিনি মনোনয়ন পান।

 

নির্বাচনী প্রচারণা ও বিশেষত্ব

 

জোহরান মামদানির প্রচারণা ছিল অত্যন্ত অভিনব ও বহুভাষিক। তিনি প্রচারণার ভিডিওগুলো বিভিন্ন ভাষায় তৈরি করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে উর্দু এবং স্প্যানিশ। এর মাধ্যমে তিনি শহরের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন।

 

তিনি তার মুসলিম পরিচয়কে গর্বের সঙ্গে সামনে এনেছেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপত্তার প্রশ্নে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, মুসলিম হিসেবে জনসমক্ষে আসার সময় নিরাপত্তার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। এই অবস্থান তাকে একটি শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

রাজনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা

 

মামদানির পরিকল্পনা ছিল নিউইয়র্ককে আরও সাশ্রয়ী ও বাসযোগ্য করা। তার মূল কিছু পরিকল্পনা হলো:

 

শহরজুড়ে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা চালু করা।

 

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও বাড়িওয়ালাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

 

সাশ্রয়ী মূল্যের মুদি দোকানের একটি চেইন গড়ে তোলা।

 

ছয় সপ্তাহ থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার প্রতিষ্ঠা।

 

সাশ্রয়ী বাসস্থানের সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি।

 

মেয়রের অফিসের পুনর্বিন্যাস করে সম্পত্তির মালিকদের দায়বদ্ধ করা।

 

তার প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি বাসা ভাড়ার সংকট তুলে ধরতে আটলান্টিক সাগরে ডুব দিয়েছেন, এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে রমজানের ইফতারে অংশগ্রহণ করেছেন।

 

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ

 

তার রাজনৈতিক পথচলা সহজ ছিল না। সাবেক গভর্নর কুওমো ও তার সমর্থকরা তাকে অভিজ্ঞতার অভাব ও অতিরিক্ত বামপন্থী হিসেবে সমালোচনা করেছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তবে তৃণমূল পর্যায়ের বিশাল সমর্থন এবং প্রচারণার ভিন্নধর্মী কৌশল তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

 

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু

 

মামদানির রাজনৈতিক অবস্থান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও স্পষ্ট। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এই কারণে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেক নেতার সঙ্গে তার মতবিরোধ হয়েছে। তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করার দাবি তুলেছেন এবং বলেছেন, “ধর্ম বা জাতিগত ভিত্তিতে নাগরিকত্বের শ্রেণিবিভাজন করা রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে পারি না।”

 

সামগ্রিক মূল্যায়ন

 

জোহরান মামদানিকে নিউইয়র্কের নবীন প্রজন্মের প্রগতিশীল নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন। যদিও তার অভিজ্ঞতার অভাব এবং কিছু রাজনৈতিক অবস্থান সমালোচনার সম্মুখীন হলেও তার নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।


এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর