আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তার প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মৃত্যুর বিষয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “ডিক চেনির মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি এবং বন্ধুদের জন্য গভীর বেদনার বিষয়।”
ডিক চেনি স্থানীয় সময় গত সোমবার রাতে নিউমোনিয়া এবং হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর জটিলতায় ৮৪ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের শ্রদ্ধা ও শ্রুতিমধুর স্মৃতিচারণ চলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর নিশ্চিত করেছে।
বুশ বলেন, “ইতিহাস তাকে তার প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্মরণ করবে। তিনি ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক, সততা, প্রজ্ঞা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তার সৎ ও স্পষ্ট পরামর্শের ওপর নির্ভর করতাম এবং তিনি কখনো ব্যর্থ হননি। তিনি আমেরিকান জনগণের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।”
অন্যদিকে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনডোলিজা রাইস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, “আমি তার সততা এবং দেশপ্রেমের জন্য তাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষ এবং অসাধারণ পরামর্শদাতা। তিনি আমাকে জনসেবার প্রকৃত মানে শিখিয়েছেন।”
ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, “আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও আমি সবসময় তার নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধকে সম্মান করেছি।”
বিবিসি জানায়, দীর্ঘদিন রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন চেনি। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে দলটির কঠোর সমালোচকে পরিণত হন তিনি। ট্রাম্প এখনও চেনির মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি খবরটি জানেন। রিপাবলিকান প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেছেন, “রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তার ত্যাগ ও সেবাকে সম্মান জানাতে হবে।”
চেনির মৃত্যুর পর মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
ডিক চেনি ১৯৪১ সালে নেব্রাসকার লিংকনে জন্মগ্রহণ করেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করলেও স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি, পরে ওয়াইওমিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে তরুণ রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের সহকারী হিসেবে ওয়াশিংটনে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের চিফ অব স্টাফ হন মাত্র ৩৪ বছর বয়সে। এরপর এক দশক ধরে প্রতিনিধি পরিষদে কাজ করেন।
জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ১৯৯০-৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের তত্ত্বাবধান করেন। ২০০১ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং মার্কিন নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুমাত্রিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ভাইস প্রেসিডেন্টদের একজন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।