স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের শান্তিপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের লাঠিচার্জে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে, আল রাজী টাওয়ারের সামনে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে।
ঘটনার শুরু ও সংঘর্ষের পটভূমি: এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের একটি বিক্ষোভ মিছিল যাওয়ার সময় উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উভয়পক্ষ একে অপরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে উভয় দলের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।
সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন দুই দলের শত শত নেতাকর্মী। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের সময় ‘হামলার’ অভিযোগ: গণঅধিকার পরিষদের দাবি, রাত ৯টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ করেই লাঠিচার্জ শুরু করেন। এতে সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামানসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় থাকা নুরুল হক নুরকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আহত নুরুল হক নুর ঢাকা মেডিকেলে
নেতাদের বক্তব্য ও প্রতিবাদ কর্মসূচি: গণঅধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বলেন,“আমরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে সংবাদ ব্রিফিং করছিলাম। হঠাৎ করেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের অনেকেই রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।”
গণঅধিকার পরিষদের একজন উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ বলেন,“আমরা জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। অথচ আমাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে।”
দলটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে। একইসঙ্গে শনিবার (৩০ আগস্ট) দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
জাতীয় পার্টির পাল্টা অভিযোগ: এদিকে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও গণঅধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। দলটির মহাসচিব শামীম পাটোয়ারী বলেন,
“আমাদের পার্টি অফিসে অভ্যন্তরীণ মিটিং চলছিল। এই সময় গণঅধিকার পরিষদের বেআইনি মিছিল থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। পরে আমরা প্রতিরোধ করি।”
তিনি আরও বলেন,“গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে আমাদের দলের নিবন্ধন বাতিল ও চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এটা সুস্পষ্ট উসকানি এবং দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অপচেষ্টা।”
▶ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
রমনা থানার এসআই অরূপ তালুকদার সাংবাদিকদের জানান,“এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
▶ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের প্রতিক্রিয়া
গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন,
“নুরের ওপর হামলা ন্যাক্কারজনক। আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত করব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন,“জুলাইয়ের গণআন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের সহিংসতা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য।”
এশিয়ানপোস্ট/আরজে