তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু
অনলাইন রিপোর্টার
বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ৩১ ডিসেম্বর বুধবার বিকাল ৩টা ৩ মিনিটে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ব্যাপক শোকসভা, গায়েবানা জানাজা ও মাগফিরাতের আয়োজন করা হয়। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত মূল জানাজার সঙ্গে সমন্বয় রেখে একযোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাখো মানুষ মরহুমার আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনায় নামাজ-জানাজায় অংশ নেন।
রংপুর শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য রিটা রহমানের উদ্যোগে আয়োজিত এ জানাজায় ইমামতি করেন নজিরহাট বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. হামিদুল ইসলাম। জানাজায় মহানগর বিএনপি নেতা কাওছার জামান বাবলা, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। জানাজার পর মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর জুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।
বগুড়ায় বিকেল ৩টায় আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠ ও আশপাশ মুসল্লি ও শোকাহত মানুষের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়। ইমামতি করেন আলতাফুন্নেসা জামে মসজিদের ইমাম। জানাজার পর মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে সুরাজ মহিনী ইনস্টিটিউট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ভান্ডারিয়া সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যাপক মোস্তফা সিরাজুল কবির ইমামতি করেন। খানখানাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ কে এম ইকবাল হোসেন, পাচুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে একটি বড় পর্দার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত মূল জানাজার সিঙ্ক্রোনাইজড প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আজাদ হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ জানাজার নামাজ ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা যেতে না পারলেও এভাবে লাখো মানুষ মরহুমার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
রাজশাহীর টিকাপাড়া ঈদগাহ মাঠে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে একই সময়ে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতা কর্মীরা টিকাপাড়া ঈদগাহ মাঠে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শ্রমিকরা মসজিদ প্রাঙ্গণে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন গণমানুষের নেতা, তাঁর মৃত্যুতে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তার রাজনৈতিক শিষ্টাচার সকলের জন্য অনুকরণীয়।
কুষ্টিয়ার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জোহর নামাজের পর স্থানীয় আমলাপাড়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি ও সাধারণ মানুষ এ জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পর মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত হয়। বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় নেত্রী ছিলেন, দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি ৭ দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কালো ব্যাজ ধারণ, দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও দোয়া মাহফিলসহ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। জেলা মহিলা দলের আয়োজনে খতমে কুরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জেলা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জোহরের নামাজের পর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন ইমামতি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত, দেশের প্রায় সকল মানুষের কাছে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
চাঁদপুর শহরের হাসান আলী স্কুল মাঠে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা জসিম উদ্দিন ইমামতি করেন। বিএনপি, জামাতসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্ল্যা সেলিম বলেন, নেত্রী কখনো অন্যায়ের সাথে আপস করেননি, আজীবন দেশের জনগণের সমর্থন পেয়েছেন।
নাটোরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথকভাবে জানাজা শেষে মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। জানাজার স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার পারলৌকিক শান্তি ও মঙ্গল কামনায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সমাজের উদ্যোগে বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, কল্পতরু দান, হাজার প্রদীপ দান সহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ দেশনেত্রীর শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা ও আশীর্বাদ প্রদান করেন।
এশিয়ানপোস্ট/ এফআরজে