আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী একটি সংস্থা। শনিবার রাজধানী কিয়েভে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ভারখোভনা রাদায় অভিযান চালাতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বাধার মুখে পড়েন সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তারা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও জল্পনা তৈরি হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন একটি দুর্নীতি তদন্তের অংশ হিসেবে পার্লামেন্টের ভেতরে অভিযান পরিচালনা করতে যান দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তারা। তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের সদস্যরা তাদের কার্যক্রমে বাধা দেন। তদন্তকারীদের দাবি, পার্লামেন্টের কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য একটি সংগঠিত অপরাধী চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
ইউক্রেনের জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো (নাবু) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গোপন তদন্ত পরিচালনার মাধ্যমে তারা একটি শক্তিশালী অপরাধী চক্রের সন্ধান পেয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে স্পেশালাইজড অ্যান্টি-করাপশন প্রসিকিউটরস অফিস (সাপো) যৌথভাবে কাজ করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ওই চক্রে দেশটির বর্তমান সংসদের কয়েকজন সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নাবু আরও জানায়, ভারখোভনা রাদার বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সময় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরা তাদের কর্মকর্তাদের বাধা দিয়েছেন। এতে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং সংস্থাটির স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এই বাধা দেওয়ার মাধ্যমে প্রভাবশালী মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাচ্ছে।
এদিকে এই অভিযানের ঘটনাটি এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ অবসানের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা রয়েছে। সফরের ঠিক আগে পার্লামেন্টে তার শীর্ষ সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধকালীন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে যে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, তা অব্যাহত রাখতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যেই রাশিয়ার হামলা ইউক্রেনের সংকট আরও গভীর করেছে। শনিবার কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজন নিহত এবং দুই ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। হামলার ফলে প্রচণ্ড শীতে লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
রুশ হামলার পর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ানরা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। বরং ইউক্রেনকে আরও বেশি ভোগান্তিতে ফেলতে এবং বিশ্বজুড়ে অন্যদের ওপর চাপ বাড়াতে মস্কো প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।