আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
রাশিয়ার লাগাতার হামলার মুখে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ইউক্রেনের অবশ্য এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পেতে আগে থেকেই ওয়াশিংটনের কাছে অনুরোধ করে আসছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই কিয়েভ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এমন অস্ত্র চেয়ে আসছে, যা দিয়ে ফ্রন্টলাইনের বহু দূরে অবস্থিত রাশিয়ার বড় শহরগুলোতেও যেন আঘাত হানা সম্ভব হয়। ইউক্রেনের যুক্তি, এসব অস্ত্র পেলে তারা রাশিয়ার সামরিক শিল্পকে বড় ধাক্কা দিতে পারবে এবং যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার দিকে এগোবে।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান হাভরিলিউক বিবিসিকে বলেন, “যদি মস্কোর জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া খুব ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, তাহলে তারা বাধ্য হবে শান্তি আলোচনায় বসতে।” অন্যদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, “ইউক্রেনের সরকারের হাতে এমন কোনো জাদুকরী সমাধান নেই যা ফ্রন্টলাইনের পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। টমাহক হোক বা অন্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র— কোনোটিই যুদ্ধে মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারবে না।”
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার (১৫০০ মাইল)। অর্থাৎ ইউক্রেন চাইলে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মস্কো পর্যন্ত আঘাত হানতে পারবে। এর আগে গত রোববার ভ্যান্স এ নিয়ে দ্বিধান্বিত বক্তব্য রাখলেও ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন বিশেষ দূত কিথ কেলগ ইঙ্গিত দেন যে ট্রাম্প ইতোমধ্যে রাশিয়ার ভেতরে গভীর অঞ্চলে হামলার অনুমোদন দিয়েছেন। ফক্স নিউজে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উত্তর হলো হ্যাঁ। (রুশ ভূভণ্ডের) গভীরে আঘাত হানার সক্ষমতা ব্যবহার করো— এমন কোনো নিরাপদ অঞ্চল নেই।”
ভ্যান্স ও কেলগের মন্তব্য মার্কিন প্রশাসনের সাম্প্রতিক সুর পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর আগে ট্রাম্প বারবার সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে ইউক্রেন রাশিয়ার হামলার বিপরীতে টিকে থাকতে পারবে কিনা। তবে গত সপ্তাহে তিনি বলেন, ইউক্রেন “তার সম্পূর্ণ ভূখণ্ড ফিরে পেতে পারে”। আর তাই এই মন্তব্য প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও বিস্মিত করেছে।
মূলত ট্রাম্পের বিরক্তির কারণ, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তির কথা বললেও বাস্তবে ইউক্রেনের শহরগুলোতে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গত রোববারই টানা ১২ ঘণ্টার এক হামলায় শত শত ড্রোন ও প্রায় ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে রাশিয়া। এতে কিয়েভে অন্তত চারজন নিহত ও ৭০ জনের বেশি আহত হন।
হাভরিলিউক বলেন, রাশিয়া আকাশপথে তাদের হামলার মাত্রা ও ভয়াবহতা আরও বাড়াবে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সুরক্ষা পেতে ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের কাছে কমপক্ষে ১০ ইউনিট প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছে।
তিনি বলেন, যত বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়া ছোড়ে, ততই ইউক্রেনের পক্ষে সেগুলো প্রতিহত করা কঠিন হয়ে ওঠে। চলতি মাসের শুরুতে মস্কো একসঙ্গে ৮০০ টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে, যা পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। এমন বড় আকারের হামলায় প্রতিরোধের হার স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।
হাভরিলিউক জানান, রাশিয়া এখন নতুন ধরনের ড্রোন ব্যবহার করছে যা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম। ২০২৩ সালে প্রথম ইরানি ‘শাহেদ’ ড্রোন ব্যবহার করা হলে সহজেই ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে প্রতিহত করা যেত। কিন্তু এখন ১৬-চ্যানেল অ্যান্টেনা ব্যবহার করায় সেগুলো প্রতিরোধ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
তার মতে, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী হলে শুধু নিজেদের নয়, ইউরোপকেও রক্ষা করা যাবে। সম্প্রতি রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ার ঘটনায় তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা মানে পুরো ইউরোপের নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করা। এতে পুতিনের ইউরোপকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা ব্যাহত হবে।”
এশিয়ানপোস্ট/ আরজে