আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর পর বস্ত্র ও পোশাকের বিকল্প বাজারের খোঁজ করছে নয়া দিল্লি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বার্তাসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, তারা ৪০টি দেশকে বেশি করে ভারতীয় বস্ত্র ও পোশাক ক্রয়ের আহ্বান জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইটালি, স্পেন, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো যেমন আছে তেমনি রয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশিয়ার দেশও। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, আমিরাত, ক্যানাডা, মেক্সিকোর মতো দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে ভারত। এছাড়া রাশিয়া ও চীনের সঙ্গেও এ ইস্যুতে আলোচনা শিগগিরই শুরু হবে।
এই ৪০টি দেশে সম্মিলিতভাবে ৫৯০ বিলিয়ান মার্কিন ডলারের বাজার আছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, “আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশকে বলেছি এবং শিগগিরই অন্যান্য দেশকেও বলব যে আমাদের পোশাক ও বস্ত্রের মান খুব ভালো, টেকসই এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার ছাপ এখানে স্পষ্ট। সেজন্যই ভারতীয় পোশাক ও বস্ত্র অন্যদের থেকে আলাদা।”
ভারত যুক্তরাষ্ট্রে গত আর্থিক বছরে এক হাজার ৮০ কোটি ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি করেছিল। তবে সেই সব দিন এখন সোনালী অতীত। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। বর্ধিত এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে গত ২৭ আগস্ট থেকে।
৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর ফলে হাজার হাজার কোটি ডলার লোকসানের মুখে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে দেশটির বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত। সেই ক্ষতিপূরণের জন্যই এ নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ভারতীয় দূতাবাস এবং ভারতীয় শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বহির্বিশ্বের দেশগুলোতে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করবে।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্ততা (আইসিএস), ভারতের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম দূরদর্শনের , সাবেক পরিচালক এবং সাবেক এমপি জহর সরকার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, “সরকার এখন যে চেষ্টা করছে, তাতে কিছুটা কাজ হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কমে যাওয়ার পুরো ক্ষতিপূরণ এভাবে হবে না। আমাদের আরো কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের ভিতরে এসব পণ্যের ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে।”
“যেমন ধরুন, চিংড়ি রপ্তানিতে ধাক্কা লাগলে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ওড়িশা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে জাপানে রপ্তানি খানিকটা বাড়ানো যেতে পারে, বাকিটা আমাদের দেশের ভিতরে বাজারে ছাড়তে হবে।”
“কিন্তু এটা একটু কঠিন। কারণ আমাদের ফিসক্যাল নীতির দুটো গলদ আছে। ক্যাপিটালে বিনিয়োগ সরকার করছে, কিন্তু বেসরকারি সংস্থা করছে না। এটা রাতারাতি হবে না। দ্বিতীয়ত, পণ্যভোগ বা কনজাম্পশন কম। যাদের খরচ করার ক্ষমতা আছে, তারা করছে না। চীনও ঘরোয়া বাজার তৈরি করে সমস্যার মোকাবিলা করেছে।”
জহর সরকার মনে করেন, “পোশাকের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে। তুলোর দাম সস্তা হলে কৃষকরা মার খাবে, কিন্তু নির্মাতাদের সুবিধা হবে। এখন দেখতে হবে, কোথায় বেশি মানুষ যুক্ত, চাষের ক্ষেত্রে নাকি কারখানা বা পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে।”
তবে তার মত হলো, ”সংস্থাগুলোকে রপ্তানির ক্ষেত্রে ইনসেনটিভ দিতে হবে। আমার মতে, কার্গো কমপেনসেশন বা পণ্য পাঠাবার জন্য খরচটা দেওয়া যেতে পারে। আমরা আরসিইপি বা রিজিওন্যাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। সেখানে এখন যোগ দেওয়া উচিত। এই ঝুঁকিটা নেওয়া যেতেই পারে।”
‘এছাড়া কোনো উপায় নেই‘
যোজনা কমিশনের সাবেক আমলা ও লেখক অমিতাভ রায় ডিডাব্লিউকে বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের ধাক্কা সামলাবার জন্য ভারতকে অন্য দেশে বাজার খুঁজতে হবে এবং দেশের বাজারকেও আরো চঙ্গা করতে হবে।”
তার মতে, “ভারত যে ৪০টি দেশ বেছে নিয়ে সেখানে পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে এটা ঠিক পদক্ষেপ। তবে সমস্যা হলো, ইউরোপের দেশগুলি থেকে শুরু অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডার মতো দেশের জনসংখ্যা ও চাহিদা তুলনায় কম। রাশিয়ার কাছে এখন অর্থ নেই। চীন নিজের দেশের বাইরে ভিয়েতনাম থেকে সস্তায় পোশাক ও বস্ত্র কেনে। তারা যদি এরপরও ভারত থেকে পোশাক ও বস্ত্র কিনতে রাজি হয় তাহলে ভালো কথা। সেজন্যই আমাদের নিজের দেশের ভিতরে বাজার বাড়াতেই হবে।”
তিনি বলেছেন, “যে পোশাকটা অ্যামেরিকায় এক হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হয়, সেটা বানাতে হয়ত একশ টাকা লাগে। এখন সামান্য লাভ রেখে তা দেশে বিক্রির ব্যবস্থা করুক উৎপাদনকারীরা। তাতে তাদের লাভের পরিমাণ হয়তো কম হবে, কিন্তু পণ্য বিক্রি হয়ে যাবে এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরাও বাঁচবেন।”
এশিয়ানপোস্ট/আরজে