আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা না মেনে রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতীয় পণ্যের ওপর আরও ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক চালু হয়ে গেছে। আগে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল। এবার আরও ২৫ শতাংশ বসলো। সবমিলিয়ে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসালো যুক্তরাষ্ট্র।
কোথায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গতবছরের তুলনায় এই বছর আমেরিকায় ভারতের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কমবে। ট্রাম্পের শুল্ক-ধাক্কা সবচেয়ে বেশি পড়বে বস্ত্র, দামী পাথর ও অলঙ্কার, সামুদ্রিক খাবার, কেমিক্যাল, গাড়ির যন্ত্রাংশর মতো ক্ষেত্রগুলোতে। বহু বছর ধরে এই সব ক্ষেত্রগুলো রপ্তানিতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল এবং এই সব শিল্পে কোটি কোটি মানুষ কাজ করেন।
বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল আমেরিকা। তারা ভারত থেকে এক হাজার ৮০ কোটি ডলারের বস্ত্র ও পোশাক আমদানি করে। এখন ভারতের বস্ত্র ও পোশাকের ওপর প্রকৃতপক্ষে ৬৩ দশমিক নয় শতাংশ শুল্ক বসলো।
তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুরে তৈরি পোশাকের একটা বড় অংশের উৎপাদন হয়। তিরুপ্পুর সুতিবস্ত্র উৎপাদনের গ্লোবাল হাবে পরিণত হয়েছে। এখানে ছয় লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তিরুপ্পুরের বস্ত্রশিল্প ও শ্রমিকরা ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কার ফলে রীতিমতো বিপদে পড়বেন। গত আর্থিক বছরে ৫৩৩ কোটি রুপির রেডিমেড পোশাক আমেরিকায় রপ্তানি হয়েছিল।
অলঙ্কার ও রত্ন
গত আর্থিক বছরে ভারত থেকে আমেরিকায় দামী পাথর ও অলঙ্কার রপ্তানি হয়েছিল ৯৯৪ কোটি ডলারের। সারা বিশ্বে ভারত থেকে যে অলঙ্কার ও দামী পাথর রপ্তানি হয়, তার তিনভাগের একভাগ যায় আমেরিকায়।
ভারতে হীরের ব্যবসার ৮০ শতাংশ হয় সুরাটে। সেই অলঙ্কার ও দামী পাথরের ওপর ৫২ দশমিক এক শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে তার প্রভাব ভারতে পড়তে বাধ্য। সুরাটে অনেকে চাকরি হারাতে পারেন। ভারত থেকে যে চিংড়ি রপ্তানি হয়, তার ৫০ শতাংশ যায় আমেরিকায়। গতবছর ২০ হাজার কোটি রুপির চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে আমেরিকায়। সবমিলিয়ে সামুদ্রিক খাবার ও চিংড়ির ওপর ৬০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে।
ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বলছেন, তারা ইকুয়েডরে চিংড়ি রপ্তানি করবেন। ইকুয়েডর থেকে ১৫ শতাংশ হারে পণ্য আমদানি করে আমেরিকা।
অন্য পণ্য
কার্পেট, আসবাবপত্র, ঘরোয়া কাপড়ের ওপর ৫২ দশমিক নয় শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে। চামড়া ও জুতোর ওপর ৫০ শতাংশ, গাড়ি ও ছোট ট্রাকের যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ ও বাকি অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশের ওপর ৫০ শতাংশ হারে শুল্ক বসানো হয়েছে।
রাসায়নিক ও অর্গানিক জিনিসের ওপর ৫৪ শতাংশ হারে শুল্ক বসেছে। এই সব ক্ষেত্রেই শুল্কের প্রভাব ভালো করেই পড়বে।
যে সব পণ্যে ছাড় আছে
ওষুধ, ইলেকট্রনিক জিনিস, ইস্পাত ও বেস মেটাল, পেট্রোপণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসছে না। ভারত থেকে আমেরিকায় এক হাজার ৫২ কোটি ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়। এক হাজার ৪৬৪ কোটি ডলারের ইলেকট্রনিক জিনিস এবং ৪১০ কোটি ডলারের পেট্রো পণ্য রপ্তানি হয়।
কোথায় আঘাত লাগবে?
ভারত থেকে রপ্তানির ৭০ শতাংশই করে ছোট ও মাঝারি শিল্প বা এমএসএমই। অনেকক্ষেত্রেই একটি জায়গাকে কেন্দ্র করে একটি রপ্তানিনির্ভর শিল্প গড়ে ওঠে। যেমন তিরুপ্পুরে বস্ত্র, সুরাটে হীরে, পানিপথে হোম টেক্সটাইলস, মোরবিতে সেরামিক।
এই সংস্থাগুলো অল্প লাভ রেখে বেশি পরিমাণ পণ্য রপ্তানির নীতি নিয়ে চলে। শুল্ক ধাক্কার ফলে তারা বেসামাল হয়ে যেতে পারে। তারা আর অন্যদের থেকে সস্তায় জিনিস দিতে পারবে না। ফলে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠা সম্ভব হবে না।
ক্রিসিলের ডিরেক্টর পূষণ শর্মা জানিয়েছেন, “উঁচু হারে শুল্কের ফলে এই শিল্পগুলো সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে প্রচুর মানুষ কাজ হারাবেন। বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক ও দৈনিক কাজের ভিত্তিতে টাকা পাওয়া কর্মীদের ওপর আঘাত আসবে। সংখ্যায় তারাই বেশি।”
ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব
মর্গ্যান স্ট্যানলি, ফ্লিচের মতো সংস্থাগুলো এরপরও জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে ভারতের অর্থনীতি ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে বাড়বে। তাদের মতে, ভারতের জিডিপিতে পণ্য রপ্তানির ভূমিকা কম। টেলিকম, সিমেন্ট, পরিষেবা ও অসামরিক পরিবহন ক্ষেত্রে ভারতের ঘরোয়া চাহিদা বাড়ছে। তারা কিছুটা ধাক্কা সামলে নেবে। তবে এই শুল্ক-ধাক্কা শেষপর্যন্ত কতটা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে তা সময়ই বলবে।
এশিয়ান পোস্ট/আরজে