রফিকুল ইসলাম রাজুঃ
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। রাত ৯টা থেকে ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে গণমাধ্যম পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজ দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনও নিহতের ঘটনা ঘটেনি।’
আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে। রাত ৯টা থেকে সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে মন্ত্রণালয়।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে। তিন ঘণ্টা অতিক্রম করলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন লাগার কারণে দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা হয়। আগুন ছড়াতে থাকায় ইউনিটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানিয়েছেন, কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার কারণে বিমানবন্দরে সমস্ত উড়োজাহাজের ওঠানামা সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার সময়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।

কার্গো ভিলেজ মূলত আমদানি ও রপ্তানির পণ্য রাখার স্থান। এখানে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য, যেমন কম ওজনের যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক পণ্য, পচনশীল পণ্য ও তৈরি পোশাক রাখা হয়। আগুন লাগার তিন ঘণ্টা পরও কার্গো ভিলেজ থেকে প্রচুর ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এ কারণে উক্ত এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় জমেছে। বিমানবাহিনী মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলেছে।
অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট এবং নৌবাহিনী যুক্ত হয়েছে। দুই প্লাটুন বিজিবিও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। শাহজালাল বিমানবন্দর পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত কার্গো ভিলেজে আগুন লাগেছে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে। এটি বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে, যা হ্যাঙ্গার গেট হিসেবে পরিচিত। কমপ্লেক্সে মোট ৩টি গেট রয়েছে, আগুন লাগেছে ৩ নম্বর গেটের পাশের উত্তর দিকের অংশে।
উড়োজাহাজ থেকে মালামাল ওঠানো–নামানোর দায়িত্বে থাকা কোম্পানি ভয়েজার এভিয়েশনের গাড়িচালক মো. রাসেল মোল্লা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সময় তার গাড়ি কমপ্লেক্সের ১০০ মিটারের মধ্যে ছিল। তিনি গাড়ি দ্রুত সরিয়ে দেন এবং ভেতরে থাকা মানুষদের নিরাপদে বের করে দেওয়া হয়।

কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার ফলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বিঘ্নিত হয়েছে। সাধারণত এ বিমানবন্দর দিয়ে তুলনামূলকভাবে কম ওজনের যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক পণ্য, পচনশীল পণ্য ও তৈরি পোশাক আমদানি করা হয়। আগুনের ফলে পণ্যের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল বলেন, আগুনের কারণে আমদানিকারকদের বড় ক্ষতি হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে এবং কার্গো ভিলেজ পুনরায় চালু হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হবে।
এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে নয়টি ফ্লাইট ঢাকায় নামতে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটটি এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইট অবতরণ করেছে।
এদিকে আগুন লাগার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে এতো সময় লাগার ঘটনা উদ্বেগজনক। এ পরিস্থিতি ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্স মূলত আমদানি-রপ্তানির পণ্য রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখানে শুল্ক প্রক্রিয়া, দলিলপত্র, বিমান সংস্থা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অফিস থাকে। পণ্য আমদানি–রপ্তানির জন্য শুল্ক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত পণ্য এখানে রাখা হয়। পণ্যধারীর চাহিদা অনুযায়ী কিছু পণ্য কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিনের জন্য এখানে অপেক্ষমাণ থাকে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর। এখানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। আগুনের কারণে এ বিমানবন্দরে কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সব ধরনের সামর্থ্য mobilisation করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি সহায়তা করছে।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, কার্গো ভিলেজে আগুনের কারণে প্রচুর মালামাল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। বিমা দাবির প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগুনের পর দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং কার্গো কার্যক্রম পুনরায় সচল করা হবে। বিমানবন্দর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে। এ ঘটনার ফলে সাধারণ যাত্রী ও আমদানিকারক উভয়েই বিপদে পড়েছেন।
এশিয়ানপোস্ট / আরজে