আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এইচ-ওয়ান বি ভিসার ফি বৃদ্ধি করায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হবে ভারতীয়রা। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। উল্লেখ্য, এইচ-ওয়ান বি একটি বিশেষ ভিসা কর্মসূচি, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো অস্থায়ীভাবে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি বা প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ৮৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
মূলত বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল বিদ্যা এবং ব্যাবসায় প্রশাসনে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এ ভিসার আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল, গুগল প্রভৃতি বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানিগুলো এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় লাভবান বা সুবিধাভোগী। শত শত বিদেশি কর্মী এসব কোম্পানিতে চাকরি করেন।
এতদিন এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে ভিসা ফি বাবদ প্রতি বছর ১ হাজার ৫০০ ডলার ফি দিতে হতো। সেটি এখন বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতের কর্মীদের বলা হয় স্টেম ওয়ার্কার। মার্কিন পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশটিতে যত সংখ্যক বিদেশি স্টেম ওয়ার্কার ছিল, এইচ-ওয়ান বি ভিসা কর্মসূচি চালু হওয়ার পর সেখানে যোগ হয়েছেন আরও ২৫ লাখ বিদেশে স্টেম ওয়ার্কার। শতকরা হিসেবে ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ ভিসা কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকর্মীদের হার বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই কর্মীদের অধিকাংশই ভারত এবং চীন থেকে আসা।
পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসেব আরও বলছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব স্টেম ওয়ার্কার চাকরি করছেন, তাদের ৭১ শতাংশ ভারতীয়, ১১ দশমিক ৭ শতাংশ চীনা এবং বাকি ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ অন্যান্য দেশ থেকে আসা। অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, গুগলের মতো কোম্পানিগুলোতে যেসব বিদেশি কর্মী চাকরি করেন, তাদের অধিকাংশই ভারতীয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভারতীয় দক্ষ কর্মীদের আগমনের হারও অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, “আমরা জানি এই ভিসা ফি বৃদ্ধি বড় বড় কোম্পানির জন্য একটি বড় ধাক্কা। এ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।”
“আমাদের যুক্তি পরিষ্কার। বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে আনছে। এই ভিসা ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা তাদের এই বার্তা দিতে চাই যে যদি আপনারা দক্ষ কর্মী চান— তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়োগ করুন, অথবা মার্কিনিদের প্রশিক্ষিত করুন। আমাদের চাকরি বাইরের লোকজনদের কেড়ে নিতে দেবেন না।”
ভিসা ফি বৃদ্ধির পর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু এসব কোম্পানির কোনো মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানতে চাননি। সূত্র : রয়টার্স