আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
নেপালজুড়ে উত্তাল আন্দোলন চলছে জেনারেশন জেড বা ‘জেন-জি’ প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বে। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার অভিযোগ এনে রাস্তায় নেমেছে তারা। এই বিক্ষোভ এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েছে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গেছে একজন তরুণের, আহত হয়েছে বহু মানুষ।
সংঘর্ষে নিহত ১, আহত বহু
নেপালের প্রভাবশালী দৈনিক The Kathmandu Post জানায়, সোমবার (স্থানীয় সময়) সকাল ৯টার দিকে কাঠমান্ডুর নয়া বাণেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন তরুণকে স্থানীয় সিভিল হাসপাতালে নেওয়া হলে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহন চন্দ্র রেগমি নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া, আহতদের কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতাল যেমন এভারেস্ট হাসপাতাল, সিভিল হাসপাতাল এবং অন্যান্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের সংখ্যা কয়েক ডজন ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর পরপরই পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিক্ষোভের কারণে কাঠমান্ডুর বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন।
Gen-Z-এর নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল থেকে রাস্তায়’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নেপালের তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় #NepoKid ও #NepoBabies ট্রেন্ডের মাধ্যমে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পরিবারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। সরকারের তরফ থেকে অঅনুমোদিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে এই প্রতিবাদ তীব্র হয়।
সোমবার সেই প্রতিবাদ ডিজিটাল পরিসর থেকে সরাসরি রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। তরুণ-তরুণীরা স্কুল ইউনিফর্ম পরে, হাতে বই নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বার্তা দিলেও পরিস্থিতি ক্রমেই সহিংস হয়ে পড়ে।
‘হামি নেপাল’ সংগঠনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ
এই বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন ‘হামি নেপাল’। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আয়োজনের কথা বললেও বাস্তবে তা ভয়াবহ সংঘর্ষে পরিণত হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুঙ জানান, “এই আন্দোলন শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যম নয়, এটি দেশের গভীর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আমাদের তরুণ প্রজন্মের আওয়াজ।”
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন শুধু কাঠমান্ডু নয়, দেশের অন্যান্য প্রধান শহর যেমন পোখারা, বিরাটনগর, ভুটওল ইত্যাদি স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
রাজনৈতিক পরিবারতন্ত্রের অবসান
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা
ডিজিটাল অধিকার রক্ষা
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
বিক্ষোভে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে নেপাল সরকারকে।

আন্দোলনের পেছনে কারা?
এই আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি Gen Z—যারা ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছে, সচেতন এবং সোচ্চার। তাদের দাবি:
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ
প্রশাসনের জবাবদিহিতা
ডিজিটাল অধিকার বনাম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ
নেপাল সরকার সাম্প্রতিক সময়ে TikTok, Facebook, Twitter ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয়। সরকারের মতে, এসব প্ল্যাটফর্মে “গুজব ও রাষ্ট্রবিরোধী” তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু তরুণ সমাজ এই পদক্ষেপকে অভিব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে দেখছে।
আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ
বিক্ষোভের ভয়াবহতা ও সরকারের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সংবিধান ও মানবাধিকারের সীমালঙ্ঘন না করতে নেপাল সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।
এশিয়ানপোস্ট/আরজে