আন্তর্জাতিক ডেস্ক
স্পেনে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের জেরে লা ভুয়েল্তা প্রতিযোগিতায় জার্সি থেকে দেশের নাম সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েলি সাইক্লিং দল। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতি থেকে ক্রীড়াঙ্গন পর্যন্ত। অন্যদিকে এই প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলি দলকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, স্পেনে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের মুখে লা ভুয়েল্তা সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় নিজেদের জার্সি থেকে ‘ইসরায়েল’ শব্দ মুছে ফেলেছে ইসরায়েল-প্রিমিয়ার টেক দল। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে দলটি জানিয়েছে, পুরো প্রতিযোগিতার বাকি সময়ে আর জার্সিতে দেশের নাম থাকবে না।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “প্রতিবাদকারীদের আচরণ বিপজ্জনক হয়ে ওঠায় আমাদের সাইক্লিস্ট ও পুরো প্যালোটনের নিরাপত্তা সবার আগে বিবেচনা করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মূলত স্প্যানিশ এই প্রতিযোগিতা ঘিরে কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। বিক্ষোভের কারণে বিলবাওয়ে বুধবারের ধাপ শেষ করতে হয়েছিল ৩ কিলোমিটার আগেই। শুক্রবার আস্তুরিয়াসে সড়কে বসে থাকা বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জ করে সরায় পুলিশ, এতে সামনের দিকে থাকা সাইক্লিস্টদের অন্তত ৩০ সেকেন্ড পিছিয়ে পড়তে হয়।
দলটি আরও জানায়, এখন তাদের জার্সি গাড়ি ও সাধারণ পোশাকের মতোই একরূপ হলো, যেগুলোতেও ‘ইসরায়েল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম স্পোর্ট ৫-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দলের কানাডীয়-ইসরায়েলি সহ-মালিক এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিলভান অ্যাডামস স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের বিক্ষোভকারীদের “সন্ত্রাসী” বলে অভিহিত করেন।
লা ভুয়েল্তার আয়োজক আমোরি স্পোর্ট অর্গানাইজেশন নাকি দলটিকে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছিল। এদিকে শুক্রবার নেতানিয়াহুও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক্সে লেখেন, “সিলভান ও ইসরায়েলি সাইক্লিং দলকে অভিনন্দন। ঘৃণা ও ভয় দেখানোয় নতি স্বীকার না করার জন্য তোমরা ইসরায়েলের গর্ব।”
কিন্তু স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস মনে করেন, ইসরায়েলি দলকে প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
শনিবার প্রতিযোগিতা আস্তুরিয়াসের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ঘুরে চললেও এবার বিক্ষোভে ব্যাঘাত ঘটেনি। তবে সড়কজুড়ে ফিলিস্তিনি পতাকা ও যুদ্ধবিরোধী নানা স্লোগান দেখা গেছে। প্রতিযোগিতা চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং শেষ হবে মাদ্রিদে। সেখানে অবশ্য ইতোমধ্যেই বড় আকারের ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৪ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি অবরোধে দুর্ভিক্ষ আর মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। এমন অবস্থ্য় ক্রীড়াঙ্গনে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়ার সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হতেই যেভাবে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ইসরায়েলের ক্ষেত্রে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভণ্ডামি দেখা যাচ্ছে।
এশিয়ানপোস্ট/আরজে