আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভে রাশিয়ার সাম্প্রতিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রমাণ করে যে মস্কো যুদ্ধের অবসান চায় না। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হওয়ার আগে শনিবার এই মন্তব্য করেন তিনি।
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভে একজনের প্রাণহানির ঘটনার পর জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ানরা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। বরং ইউক্রেনকে আরও বেশি ভোগান্তিতে ফেলতে এবং বিশ্বজুড়ে অন্যদের ওপর চাপ বাড়াতে তারা প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। তার মতে, কিয়েভে একের পর এক হামলা রাশিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে।
শনিবার কিয়েভ ও এর আশপাশের এলাকায় রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজন নিহত এবং দুই ডজন মানুষ আহত হন। এই হামলার ফলে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন। বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় চরম দুর্ভোগ দেখা দেয়।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদকরা কিয়েভ থেকে জানান, রাতভর একাধিক জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এসব বিস্ফোরণের পর কয়েক ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্কতা জারি ছিল। শনিবার রাশিয়ার হামলার সময় কিয়েভের আকাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সঙ্গে উজ্জ্বল আলোর ঝলক দেখা যায়, যা আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় নগরবাসীর মধ্যে।
কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর মিকোলা কালাশনিক জানান, এই হামলায় ৪৭ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন। অপরদিকে কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, রাজধানীতে অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
কালাশনিক আরও বলেন, হামলার কারণে কিয়েভ অঞ্চলের অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ৬০০টি আবাসিক ভবন এবং শত শত কিন্ডারগার্টেন, স্কুল ও কমিউনিটি ভবনে তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আজ সকাল পর্যন্ত কিয়েভ অঞ্চলের বাম তীরের একটি বড় অংশে বিদ্যুৎ ছিল না। বর্তমানে ৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী শনিবার ভোরের দিকে দেশজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে জানায়, রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে কয়েক দশক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। দীর্ঘ এই সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে রোববার ফ্লোরিডায় ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
জেলেনস্কির মতে, সর্বশেষ এই পরিকল্পনায় ২০ দফার প্রস্তাব রয়েছে। এতে বর্তমান যুদ্ধরেখা ধরে সংঘাত স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ পাবে ইউক্রেন। ওই অঞ্চলে একটি বাফার জোন গড়ে তোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন তিনি।
তবে শুক্রবার রাশিয়া অভিযোগ করে বলেছে, জেলেনস্কি ও তার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত এই শান্তি পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।