আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইউক্রেনে শুক্রবার রাতভর জ্বালানি, রেলপথ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শনিবার ইউক্রেন জানিয়েছে, এসব হামলার ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার পরিবার তাপ ও পানি সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা তীব্র শীতের শুরুতে অতিরিক্ত দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এমন সময় এই হামলা চালানো হলো, যখন ইউক্রেনীয় আলোচকরা টানা তৃতীয় দিনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। আলোচনার মূল বিষয়—প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত পরিকল্পনা। আলোচনার পরিবেশকে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে এই নতুন হামলা।
কিয়েভ বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাতভর ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ৬৫৩টি ড্রোন এবং ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এসব হামলার মূল লক্ষ্য ছিল জ্বালানি স্থাপনাগুলো, যেগুলো ধ্বংস করে ইউক্রেনের শীতকালীন প্রস্তুতি ভণ্ডুল করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল আবারও জ্বালানি স্থাপনাগুলো। রাশিয়ার উদ্দেশ্য হলো লাখ লাখ ইউক্রেনীয়কে দুর্ভোগে ফেলা।” তিনি আরও জানান, একটি রুশ ড্রোন হামলায় কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে ফাস্তিভ শহরের প্রধান রেলস্টেশন ভবন পুড়ে গেছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, হামলায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি; তবে শহরতলির ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে এবং রেলসুবিধা আংশিকভাবে বন্ধ আছে।
কিয়েভের কর্মকর্তারা বলেন, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চেরনিগিভ, জাপোরিঝিয়া, লভিভ এবং দনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলেও গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থাপনা পুনরুদ্ধারে দ্রুত জরুরি মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হওয়ায় কিছু এলাকায় তাপ ও পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে।
পুনর্গঠন মন্ত্রী ওলেক্সি কুলেবা জানান, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওডেসা অঞ্চলে পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। সেখানে ৯ হাজার ৫০০ গ্রাহক তাপ সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ৩৪ হাজার গ্রাহক পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। তিনি বলেন, জরুরি মেরামতকাজের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো এক্স–এ জানান, হামলার পরপরই তিনি একটি জরুরি সমন্বয় সভা আহ্বান করেন এবং জ্বালানি ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, যাতে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সেবাগুলো পুনরুদ্ধার করা যায়।
ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, শীতের শুরুতেই এ ধরনের ব্যাপক হামলা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে আবারও চাপে ফেলেছে। রাশিয়া যে জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে ইউক্রেনের সামরিক ও বেসামরিক সক্ষমতা দুর্বল করতে চায়—তা এসব হামলার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হয়েছে।