আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিল–এর টহল দলের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। শনিবার সেনাবাহিনীর এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে বৈরুত থেকে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার তিনটি মোটরসাইকেলে থাকা ছয়জন বন্দুকধারী ইউনিফিলের একটি টহল গাড়িতে গুলি চালায়। সৌভাগ্যক্রমে কোনো শান্তিরক্ষী এতে আহত হয়নি। হামলার পরপরই গোয়েন্দা অধিদপ্তর তদন্ত শুরু করে এবং শনিবার ছয়জন লেবাননি সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে। সেনাবাহিনী জানায়, ইউনিফিলের ওপর হামলা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না এবং শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।
ইউনিফিল বহু বছর ধরে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত ইসরায়েল সীমান্তের কাছে লিতানি নদীর দক্ষিণে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করলেও ইউনিফিলের উপস্থিতি সীমান্ত এলাকায় একটি কার্যকর বাফার হিসেবে কাজ করছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত।
১৯৭৮ সালের মার্চ থেকে ইউনিফিল আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব ও ম্যান্ডেট পরিবর্তিত হলেও তাদের মূল লক্ষ্য—শান্তি রক্ষা ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—অবিচল রয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণও তাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়, যা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত বন্ধের অংশ হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাবে এবং সব ধরনের হামলা বন্ধ হবে। একই সঙ্গে ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করাও এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে লেবাননের সেনাবাহিনী বলেছে, ইউনিফিলের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী যেকোনো কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করা হবে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে স্থানীয় উত্তেজনার সুযোগ নিয়ে যেসব বাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষীদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত টানাপড়েনের মধ্যেই ইউনিফিলকে লক্ষ্য করে এ হামলা হয়েছে। সীমান্ত উত্তেজনা, বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি এবং আঞ্চলিক জোট–সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইউনিফিলের গাড়ির ওপর গুলি চালানোর ঘটনা এই অঞ্চলে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত বহন করছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
দেশটির সেনাবাহিনী আশা প্রকাশ করেছে যে, গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ও তাদের পেছনে থাকা গোষ্ঠীগুলোর পরিচয় উদ্ঘাটন সহজ হবে। ইউনিফিলের ওপর হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লেবাননের প্রতি আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।