আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ক্রিসির উপকূলের কাছে মর্মান্তিক নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ১৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় গ্রিসের কোস্টগার্ড বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে নৌকাটিতে মোট ২০ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে মাত্র দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের সলিল সমাধি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোস্টগার্ড কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, নৌকাডুবির স্থানটি সাগরতীর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। নৌকাটি ডোবার অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় তুরস্কের একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজটির ক্যাপ্টেন ঘটনাটি গ্রিসের কোস্টগার্ডকে অবহিত করলে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। তবে দুর্ঘটনার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে দ্রুত সাড়া দেওয়া সত্ত্বেও ১৮ জন যাত্রীর কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
জীবিত উদ্ধার হওয়া দুই অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিকটবর্তী ক্রিট দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড। তারা কীভাবে নৌকাডুবি ঘটেছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও নৌকার দুর্বল কাঠামোকে দায়ী করা হচ্ছে।
গ্রিসের বিভিন্ন উপকূল দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশ কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০১৫-১৬ সালের শরণার্থী সংকটের সময় লিবিয়া, তুরস্ক ও মরক্কোর উপকূল থেকে নথিবিহীন হাজারো মানুষ ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেই সময় থেকেই গ্রিস ও ইতালির উপকূলে অভিবাসীদের ঢল নামে। বর্তমানে গ্রিসের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লাখেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী অবস্থান করছেন বলে উল্লেখ করা হয় সংশ্লিষ্ট মহলে।
গ্রিসে নৌকাযোগে আসা অধিকাংশ অভিবাসী সাধারণত লিবিয়ার উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করেন। তাদের লক্ষ্য থাকে গ্রিসের নিকটবর্তী তিনটি দ্বীপ—ক্রিট, গাভদোস বা ক্রিসি। ভৌগোলিকভাবে এই তিনটি দ্বীপ লিবিয়ার উপকূলের সবচেয়ে কাছে হওয়ায় ঝুঁকি সত্ত্বেও অভিবাসীর দলগুলো এই পথটি বেছে নেন। তবে সমুদ্রপথের যাত্রা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রতিকূল আবহাওয়া, নৌকার যান্ত্রিক ত্রুটি, অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ নানা কারণে যাত্রাপথেই অনেকের মৃত্যু ঘটে।
প্রায় সময়ই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির খবর আসে, যা মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে। মানবপাচার চক্রের সক্রিয়তা, ইউরোপে প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা এবং নিরাপদ অভিবাসন নীতির অনুপস্থিতি মিলিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জীবন বাজি রেখে এই ভ্রমণ করেন।
নতুন এই নৌকাডুবির ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হয়েছে যে ভূমধ্যসাগর বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক অভিবাসনপথ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলছে, অভিবাসন ঠেকানো নয়, বরং নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিত করলেই এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে। নিখোঁজদের আবিষ্কারের সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানিয়েছে গ্রিসের কোস্টগার্ড। তবে উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সূত্র : রয়টার্স