আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে একদল সেনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে ক্ষমতা দখলের দাবি করেছে, যা দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তবে সরকার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস তালনের প্রতি অনুগত বাহিনী অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে কাজ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রোববার সরকারের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানায়।
রয়টার্স জানায়, সেনাবাহিনীর একটি অংশের এই পদক্ষেপকে বেনিনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত মাসে গিনি-বিসাউয়ে অভ্যুত্থানের পর ২০২০ সাল থেকে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় এটি নবম সামরিক অভ্যুত্থান। অঞ্চলে ধারাবাহিক সামরিক ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
রোববার সকালে অন্তত আটজন সৈন্য, যাদের কয়েকজন হেলমেট পরা ছিলেন, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গিয়ে ঘোষণা দেন যে কর্নেল টিগ্রি পাস্কালের নেতৃত্বে একটি সামরিক কমিটি ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তারা জানায়, দেশের সব জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়েছে, সংবিধান স্থগিত করা হয়েছে এবং আকাশপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সৈন্যদের ওই দলটি দাবি করে, তারা বেনিনের জনগণকে নতুন যুগের আশা দিতে কাজ করছে—যেখানে ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং কাজের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে বেনিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলুশেগুন আজাদি বাকারি রয়টার্সকে বলেন, সৈন্যদের ‘‘একটি ছোট দল’’ সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, ‘‘অভ্যুত্থানের চেষ্টা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে… সেনাবাহিনীর বড় একটি অংশ এখনও অনুগত এবং আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, অভ্যুত্থানকারীরা শুধু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে। সেখানকার সম্প্রচার রোববার সকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রোববার সকালে মানুষ যখন গির্জায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন দেশটির বৃহত্তম শহর ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র কটোনুর বিভিন্ন এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়। পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হওয়ায় দেশটিতে নিযুক্ত ফরাসি দূতাবাস ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট তালনের বাসভবনের কাছে গুলির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অবস্থানরত ফরাসি নাগরিকদের বাসার বাইরে না যেতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এপ্রিলে বেনিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই সময়ে ২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস তালনের দুই মেয়াদের দায়িত্ব শেষ হবে। তালন আগেই জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব ছাড়বেন। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি বিরল ঘটনা, কারণ অঞ্চলে ক্ষমতাসীন নেতাদের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা বাড়ছে। এই বাস্তবতায় তালনের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়েছিল। তবে অভ্যুত্থানের এই ঘটনা নির্বাচনী প্রস্তুতিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
দেশটির আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন অর্থমন্ত্রী রোমুয়াল্ড ওয়াদাগনি। তিনি অর্থনৈতিক নীতিমালা ও সংস্কার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন এবং সরকারের এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতার জন্য পরিচিত। তাঁর প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনি পরিবেশে উত্তেজনা বাড়ছিল বলে রয়টার্স উল্লেখ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যুত্থানকারীদের এই পদক্ষেপ শুধু রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের ঘটনা নয়; বরং নির্বাচনের আগমুহূর্তে দেশের স্থিতিশীলতার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট তালনের সমর্থক বাহিনী ও বিদ্রোহী সেনাদের মধ্যে যদি সংঘর্ষ বাড়ে, তবে দেশটি দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়তে পারে।
এদিকে অভ্যুত্থানকারীদের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা দাবি-প্রতিদাবির পাশাপাশি গুজবও ছড়াতে থাকে। সরকার চাইছে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করে জনমনে আতঙ্ক কমাতে। প্রেসিডেন্ট তালন এখনও প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেননি। আন্তর্জাতিক মহলও পরিস্থিতি নজরদারি করছে।
সূত্র : রয়টার্স, এএফপি।