আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে জেলায় উত্তেজনা বাড়ছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় আজ শনিবার একই নামে নতুন একটি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এই উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, আর স্থানীয় বহু মানুষকে মাথায় করে ইট নিয়ে অনুষ্ঠান স্থলের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে।
শনিবার সকাল থেকেই বেলডাঙা ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় ও রাজ্য পুলিশ ছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সকাল থেকে স্থানীয়দের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। উত্তর বারাসাতের মো. শফিকুল ইসলাম নিজের অবদানের অংশ হিসেবে মাথায় ইট বহন করে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি এএনআইকে জানান, হুমায়ুন কবীর যেখানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, তিনি সেখানেই ইট নিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মুর্শিদাবাদের বাসা থেকে রওনা হওয়ার সময় তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, তিনি আজ বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন এবং পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। তিনি জানান, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশনার পর পুলিশ তার সঙ্গে কথা বলেছে এবং সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
এ ঘটনায় যেন কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে না পারে, সেজন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল রাজদীপ মজুমদার জানান, সিআইএসএফ-এর ১৯টি কোম্পানি ইতোমধ্যে এলাকায় উপস্থিত রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে র্যাফের ইউনিটসহ প্রায় ৩৫০০ নিরাপত্তাকর্মী রেজিনগর ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক সুরক্ষায় বিএসএফ-এর দুটি কোম্পানিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি পার্থ সারথি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, রাজ্য সরকারকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার দুপুর ১২টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবীর জানান, অনুষ্ঠানটি দুপুর ১২টায় শুরু হবে, দুই ঘণ্টা কোরআন তেলাওয়াত করা হবে, কোনো বক্তৃতা বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে না, দলীয় পতাকাও থাকবে না। তিনি বলেন, দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং মসজিদ নির্মাণে তিন বছর সময় লাগবে। প্রয়োজনীয় অর্থ আসবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছ থেকে। তিনি রাজ্য পুলিশের সহযোগিতাও কামনা করেন।
অন্যদিকে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পুরো ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তার অভিযোগ, রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তৃণমূলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসু জনগণকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য ও গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান এবং রাজভবনে একটি ‘অ্যাক্সেস পয়েন্ট সেল’ স্থাপনের নির্দেশ দেন, যাতে সম্ভাব্য অশান্তির ওপর নজরদারি করা যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়। এ ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়। হুমায়ুন কবীরের এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কর্মসূচির আট মাস আগে ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়েছিল।