আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ ও দেশটির অভ্যন্তরীণ স্থিতি অস্থিতিশীল না করতে দখলদার ইসরায়েলকে কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার (১ ডিসেম্বর) সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশালে এক পোস্টে তিনি এ বার্তা দেন। ট্রাম্প বলেন, “সিরিয়ার সাথে ইসরায়েলের একটি সুদৃঢ় ও আন্তরিক আলোচনা বজায় রাখা এবং সিরিয়া যাতে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠিত হতে পারে, সেই পথে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত জরুরি।” তার ভাষ্যমতে, সিরিয়ার ভেতরে সামরিক অভিযান বা অনুপ্রবেশ এখন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং ইসরায়েলকে সংযত আচরণ করতে হবে।
ট্রাম্পের এই পোস্ট প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফোনে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। কথোপকথনে সিরিয়ার সাম্প্রতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি, ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেন ইসলামপন্থি আহমেদ আল শারা। বহু বছর ধরে তাকে জঙ্গি তকমা দেওয়া হলেও সিরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা তার ওপর থেকে সবধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। গত নভেম্বরে আহমেদ আল শারা যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক সফরে গিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। ট্রাম্প পরে জানান, সিরিয়ার পুনর্গঠনে শারার সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে তিনি সন্তুষ্ট।
ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন উত্তেজনার সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার। দক্ষিণ সিরিয়ার একটি এলাকায় রাতের অন্ধকারে সশস্ত্র এক গোষ্ঠীর যোদ্ধাকে আটক করতে গেলে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। ঘটনার পরপরই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সেখানে বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় শিশুসহ ১৩ জন নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দুই দেশের সম্পর্ক দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপরই ইসরায়েলের উদ্দেশে কড়া ভাষায় সতর্কবার্তা পাঠান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
মার্কিন একটি সূত্র জানায়, সিরিয়ার নতুন সরকার যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী অবস্থানে না চলে যায়, সেজন্য ইসরায়েলকে সামরিক আগ্রাসন ও ধারাবাহিক হামলা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়ার অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে বলে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামোর ওপর শতাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এসব হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি গোলান মালভূমির আরও অংশ দখল করে ইসরায়েল। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলেও দেশটির ভৌগোলিক অখণ্ডতা এখনও গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে।
এদিকে সিরিয়ার নতুন সরকারকে ‘শত্রুতে’ পরিণত না করার জন্যই ইসরায়েলকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আরেক মার্কিন সূত্র। সিরিয়াকে নতুন করে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী, ফলে তাদের অবস্থান ক্ষুণ্ন হবে এমন কোনো পদক্ষেপ বরদাশত করবে না বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সূত্র: আল আরাবিয়া