আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইন্দোনেশিয়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় এখনো উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। দেশজুড়ে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে বহু এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, এবং হাজারো মানুষ খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, মালাক্কা প্রণালিতে বিরল এক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই বিধ্বংসী বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের অস্বাভাবিক আচরণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে যুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভয়াবহ এই বন্যায় ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া প্রায় ৫০০ মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই পাহাড়ি ও উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাস করতেন।
ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কাও বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এসব দেশে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে এখনো নিখোঁজ। অবকাঠামো ধ্বংস, রাস্তা ও সেতু ভেঙে যাওয়া এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর সুমাত্রার আচেহ এবং পশ্চিম সুমাত্রা অঞ্চল। এসব এলাকায় হাজার হাজার মানুষ এখনো বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেক গ্রাম পুরোপুরি পানির নিচে ডুবে গেছে, যেখান থেকে এখনো মানুষের হাহাকার ভেসে আসছে।
আচেহ অঞ্চলের বাসিন্দা আরিনি আমালিয়া বিবিসিকে বলেন, বন্যার পানি তাদের এলাকায় সুনামির মতো আছড়ে পড়েছিল। তার দাদির মতে, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তারা আজ পর্যন্ত কখনো দেখেননি। পানির স্রোত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে অল্প সময়ের মধ্যে ঘরবাড়ি, বাজার ও সড়ক ভেসে যায়।
বন্যায় রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকারীরা পায়ে হেঁটে, নৌকায় বা মোটরসাইকেলে করে দুর্গতদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অনেক এলাকায় ভারী যন্ত্রপাতি পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় হাতে-কলমে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। অনেক মানুষ এখনো খাদ্য সহায়তার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ দুই থেকে তিনদিন ধরে না খেয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সুমাত্রার মধ্য তাপানুলির বাসিন্দা মায়শান্তি বিবিসিকে জানান, তাদের এলাকায় এখনো উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে পারেনি। তিনি বলেন, “সবকিছু ভেসে গেছে। আমাদের খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা খেতে পারছি না। এখন নুডলস নিয়েও মানুষ লড়াই করছে। আমাদের খাবার নেই। আমাদের খাবার এবং চাউল দরকার। আমাদের এখানে আসার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ।”
সরকারি ত্রাণ সংস্থা বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর পানি পুরোপুরি নামতে আরও সময় লাগবে। এর মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের সংকট আরও প্রকট হতে পারে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমে সহযোগিতা শুরু করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন—আরও বৃষ্টি হতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। উদ্ধারকারী দলগুলো নিখোঁজদের খোঁজে আশপাশের বনাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা এবং নদীর তীর অনুসন্ধান করছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যা-পরবর্তী মহামারি প্রতিরোধেও কাজ শুরু করেছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সামরিক বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী এবং আন্তর্জাতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তাদের লক্ষ্য দ্রুততম সময়ে দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা।