আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারতের মহারাষ্ট্রে মেয়ের প্রেমিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন গজানন বালাজি মামিদ্বার নামে এক বাবা। এই হত্যাকাণ্ডে তার দুই ভাইও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে গজানন বালাজি মামিদ্বারকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় তদন্ত শুরু হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বালাজি মামিদ্বারের মেয়ে আঁচল মামিদ্বারের সঙ্গে প্রেম ছিল সক্ষম তাতে নামে ২০ বছর বয়সী এক যুবকের। আঁচল অভিযোগ করেছেন, তার বাবা ও ভাইয়েরা প্রথমে তাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়ার ‘ভান’ করেছিল। তারা সক্ষমকে পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কথাবার্তা বললেও, বাস্তবে পরিকল্পনা করেছিল তাকে হত্যার। গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সক্ষমকে হত্যা করা হয়।
ঘটনার পর পুরো ভারতজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়, কারণ আঁচল তার মৃত প্রেমিকের মরদেহকে ‘বিয়ে’ করেছেন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৪ এপ্রিলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় বালাজি মামিদ্বার তার মেয়ে আঁচল ও তার প্রেমিক সক্ষম তাতের সঙ্গে আম্বেদকর জয়ন্তীর উৎসবে নাচছেন। সেখানে সক্ষমের কয়েকজন বন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। নাচের এক পর্যায়ে তিনি মেয়েকে কাছে টেনে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এই দৃশ্য দেখে কেউ ভাবতে পারেননি যে একই বাবা পরে নিজের মেয়ের প্রেমিককে হত্যার পরিকল্পনা করবেন।
বর্তমানে আঁচল তার বাবার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে প্রেমিক সক্ষমের পরিবারের বাড়িতে থাকছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাদের প্রেম সম্পর্কে তার বাবা প্রথমে আপত্তি তুললেও পরে দৃশ্যত রাজি হওয়ার ভান করেন। কিন্তু সেই সময়েই পরিবারের সদস্যরা সক্ষমকে হত্যার ছক কষছিল। আম্বেদকর জয়ন্তী পালন করা হয় বাবাসাহেব আম্বেদকরের জন্মদিন উপলক্ষে। সক্ষম ছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের যুবক, আর আঁচল ছিলেন পিছিয়ে পড়া বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষ। তাদের সামাজিক অবস্থান ও পরিবারগুলোর মানসিকতার কারণে প্রেমটি প্রথম থেকেই পরিবারে আলোচনার বিষয় ছিল।
সূত্র জানিয়েছে, হত্যার আগে বালাজি মামিদ্বার সক্ষমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন এবং তার বিশ্বাস অর্জন করেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সক্ষমকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। পাশাপাশি টাইলস দিয়ে তাকে আঘাতও করা হয়। এই হামলায় আঁচলের ছোট ভাইও অংশ নেয় বলে অভিযোগ, যে নিজে একজন কিশোর। গুলিবিদ্ধ হয়ে সক্ষম ঘটনাস্থলেই মারা যান।
পরদিন তার শেষকৃত্যের সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে আঁচল মৃত প্রেমিককে বিবাহ করেন। তিনি জানান, তাদের সম্পর্ক নিয়ে পরিবারে বারবার বিরোধ সৃষ্টি হলেও সক্ষম তাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত ছিল। এমনকি তার বাবা শর্ত দিয়েছিলেন যে সক্ষম তাকে বিয়ে করতে হলে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে—এতেও তিনি রাজি ছিলেন।
এ ঘটনায় গজানন বালাজি মামিদ্বার এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক অবস্থান, ধর্মান্তর, পারিবারিক সম্মান—সবকিছু মিলিয়ে পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি