আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্টেডিয়ামে জনগণের সামনে এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম মঙ্গল। তাকে খোস্ত প্রদেশের একটি স্টেডিয়ামে জনসম্মুখেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আদালত জানায়, খুনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সব প্রক্রিয়া নিখুঁতভাবে ও একাধিকবার পর্যালোচনা করার পরই চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর এ নিয়ে অন্তত ১২ জনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল তালেবান—এএফপির পরিসংখ্যানে এমনটাই উল্লেখ রয়েছে।
আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যে হত্যার অভিযোগ ছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ প্রমাণিত। ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষমা ও সমঝোতার সুযোগ দেওয়া হলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী “প্রতিশোধমূলক শাস্তি” কার্যকর করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
সোমবার দেশটির সরকারের প্রকাশিত জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে জনগণকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই সন্ত্রাসী হামলা একটি বাড়িতে ঘটেছিল, যেখানে তিন নারীসহ ১০ জন নিহত হন। মঙ্গলকে সে হামলাকারী দলের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও বিচারিক প্রক্রিয়ার পর তার ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত রিচার্ড বেনেট এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই ধরনের শাস্তি অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তিনি এমন সাজা বন্ধের আহ্বান জানান এবং মানবাধিকার সুরক্ষার ওপর জোর দেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রিচার্ড বেনেট বলেন, মৃত্যুদণ্ড—বিশেষ করে প্রকাশ্যে—মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এমন ঘটনার বিরুদ্ধে আরও স্পষ্টভাষী হওয়ার আহ্বান জানান।
তবে তালেবান প্রশাসন মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তারা বলছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে শরিয়াহভিত্তিক বিচারই সর্বোত্তম সমাধান।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিচারব্যবস্থায় দ্রুত রায় ঘোষণা, প্রকাশ্যে শাস্তি কার্যকর, কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধ ও মানবাধিকার উদ্বেগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড শুধু ভয় সৃষ্টিই নয়, বরং আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করে।