আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহর প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের কবলে পড়া শ্রীলঙ্কায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে বাধা দিচ্ছে ভারত। পাকিস্তান সরকারের এই অভিযোগ মঙ্গলবার তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কায় জরুরি মানবিক সহায়তা পাঠাতে চাচ্ছিলো, কিন্তু ভারত তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। বিশেষ একটি উড়োজাহাজে এই সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বিমানটি ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভারতের আকাশসীমায় চলাচলের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক্স (পূর্বের টুইটার) পোস্টে বলা হয়েছে, “ভারত গত রাতে আংশিক ও সীমিত সময়ের জন্য উড্ডয়ন অনুমতি দিয়েছে, যা কার্যত বাস্তবসম্মত নয়। অনুমতিটি মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য এবং ফিরতি ফ্লাইটের জন্য কোনও অনুমতি নেই। এই সীমাবদ্ধতা শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা মিশনকে গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।”
যদিও এর আগেও পাকিস্তানের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছিল যে, শ্রীলঙ্কায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য তারা ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে।
শ্রীলঙ্কা বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়াহর প্রভাবে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সম্মুখীন। এই দুর্যোগে ৪০০ এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অতীতে কখনো দেখা যায়নি বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে মন্তব্য করেছেন। তিনি এই পরিস্থিতিকে ইতিহাসের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।
শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চলের ওয়েলিমাডা শহরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা ভূমিধসের নিচে চাপা পড়া লোকজনের সন্ধানে কাদামাটি খুঁড়ে কাজ করছেন এবং নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
রাজধানী কলম্বোতে ধীরে ধীরে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের বন্যার প্রকৃতি সাধারণ মৌসুমি বন্যার থেকে ভিন্ন এবং দ্রুত পানি বৃদ্ধি হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। স্থানীয়রা বলেন, “প্রতি বছর ছোট ছোট বন্যা দেখা যায়, কিন্তু এবারের বন্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন।”
মৌসুমি বন্যার সঙ্গে ভূমিধসের সতর্কতা জারি থাকায় শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ মধ্যাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের আকাশসীমা বন্ধ করে রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের নিহত হওয়ার পর। এই ঘটনায় পরবর্তী চার দিনের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত বছর অক্টোবর মাসে পাকিস্তান ভারতের সমস্ত বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এর ফলে ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার না করেই পাকিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কায় মানবিক সহায়তা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
শ্রীলঙ্কার এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরীয় সুনামির পর দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। শ্রীলঙ্কার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ দুর্যোগে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।