আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পার্লামেন্টে বোরকাকে অসম্মান করায় অস্ট্রেলিয়ার উগ্রডানপন্থি নারী সিনেটর পওলিন হানসনকে সাত কর্মদিবসের জন্য বহিষ্কার করেছে দেশটির সিনেট। প্রকাশ্যে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন তিনি। সেই প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি সরাসরি সংসদ অধিবেশনে বোরকা পরে প্রবেশ করেন, যা সংসদে উপস্থিত আইন প্রণেতাদের কাছে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়। পরে তিনি সেটি খুলে ফেললেও এ ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভ তৈরি করে।
সিনেটে উপস্থিত বিভিন্ন দল ও মতাদর্শের আইন প্রণেতারা তার কর্মকাণ্ডের কঠোর নিন্দা জানান। তারা অভিযোগ করেন, পওলিন হানসনের আচরণ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বর্ণবিদ্বেষী এবং অস্ট্রেলিয়ার সামাজিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতার পরিপন্থী। এই ঘটনার পর সিনেটর হানসন বোরকা নিষিদ্ধ করতে যে বিল উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন, সেটিও বাতিল হয়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি অং বলেন, “সিনেটর হ্যানসনের বিদ্বেষপূর্ণ লোক দেখানো কাজ আমাদের সমাজের বন্ধনকে ছিন্নভিন্ন করেছে। তার এই আচরণ শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়াকে দুর্বল করেছে। তার কাজের জন্য অনেক সাধারণ মানুষকে এর খারাপ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ১০ লাখ মানুষ ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন। তাদের বিশ্বাসকে এমনভাবে তাচ্ছিল্য ও অপমান করার ঘটনা আমরা আগে কখনও দেখিনি।”
সমালোচনার মুখে সিনেটর হানসন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “যদি ব্যাংক বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হেলমেট খুলে ফেলতে বলা হয়, তাহলে বোরকা কেন আলাদা হবে?” তিনি দাবি করেন, তার কর্মকাণ্ড ছিল রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশের অংশ এবং পার্লামেন্টে ড্রেসকোড না থাকায় তিনি আইন ভঙ্গ করেননি।
মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত এ সিনেটর দক্ষিণ এশিয়া থেকে অভিবাসন, বিশেষ করে মুসলিম পোশাক ও ধর্মীয় চর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ১৯৯০-এর দশকেই পরিচিতি পান। তিনি বহুবার দাবি করেছেন, বোরকা নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করে এবং এটি নিষিদ্ধ করা উচিত। তবে মানবাধিকার সংগঠন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডকে ঘৃণাপ্রসূত ও বিভাজন সৃষ্টিকারী বলে আসছে।
সিনেটে বোরকা পরে প্রবেশ করার ঘটনা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পার্লামেন্টের মতো গুরুতর স্থানে এমন আচরণ ইচ্ছাকৃত উস্কানি এবং মুসলিম নারীদের পোশাককে হেয় করার একটি কৌশল। এ ঘটনার পর সিনেট তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে একমত হয় এবং তাকে সাত কর্মদিবসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সহনশীল সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় পোশাক ও পরিচয়ের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়ে যে মূল্যবোধ দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে, সিনেটরের এই আচরণ সেটিকে ক্ষুণ্ন করেছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
সূত্র: রয়টার্স