আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর নতুন একটি ফিচার চালুর পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পপন্থি প্রচার চালানো বহু জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। সিএনএন জানায়, মার্কিন রাজনীতি ও ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করা বহু অ্যাকাউন্ট আসলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়। এরই মধ্যে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামের একটি অ্যাকাউন্টের অবস্থান বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, যার অনুসারী ৬৭ হাজারের বেশি। এমন আরও অনেক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেগুলো ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হয়।
এক্স-এর নতুন ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অ্যাবাউট সেকশনে পাওয়া যায় অ্যাকাউন্টটির অবস্থান অনুযায়ী দেশ বা অঞ্চল। ব্যবহারকারী চাইলে নির্দিষ্ট দেশের নাম আড়াল করে অঞ্চল দেখানোর অপশনও বেছে নিতে পারেন। তবে এসব অ্যাকাউন্টের অবস্থান স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে সিএনএন।
সিএনএন বলছে, নতুন ফিচার চালুর ফলে বোঝা যাচ্ছে কত বিদেশি পক্ষ মার্কিন সমাজকে প্রভাবিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। একই সঙ্গে এটি ভবিষ্যতে আরও বাড়তে থাকা বিদেশি প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ এক্স প্ল্যাটফর্মে বেশি এনগেজমেন্ট ও ফলোয়ার থাকলে অ্যাকাউন্টধারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।
এক্স-এর পণ্য বিভাগের প্রধান নিকিতা বিয়ার বলেছেন, এই পরিবর্তন বৈশ্বিক আলোচনার অখণ্ডতা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে আরও যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ফিচার চালুর পর ব্যবহারকারীরা বহু অ্যাকাউন্টকে মার্কিনভিত্তিক নয় বলে শনাক্ত করতে শুরু করেন, যেগুলোর বেশিরভাগই ট্রাম্পপন্থি রাজনৈতিক কনটেন্ট শেয়ার করে।
‘মাগা নেশন’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট, যার ফলোয়ার প্রায় ৪ লাখ, নিজেকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ভাবধারার হিসেবে দাবি করে। অ্যাকাউন্টটি নিয়মিত ট্রাম্পপন্থি তথ্য, ভিডিও ক্লিপ ও বিভিন্ন ধরনের পোল প্রকাশ করে। কিন্তু এটি পরিচালিত হয় পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ থেকে।
‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামের আরেকটি অ্যাকাউন্টে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১৭ নভেম্বর এই অ্যাকাউন্ট থেকে ‘শুভ সকাল এক্স! সৃষ্টিকর্তা আমেরিকার মঙ্গল করুন’—পোস্ট করা হয়। অ্যাকাউন্টটির ফলোয়ার প্রায় ৬৭ হাজার এবং এটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ থেকে।
এসব অ্যাকাউন্টে আমেরিকাপন্থি রাজনৈতিক কনটেন্ট, ট্রাম্প ও তার পরিবারের ছবি, চলতি সংবাদ এবং এনগেজমেন্ট বাড়ানোর পোল থাকে। এসব পোস্টের মাধ্যমেই মালিকরা এক্স থেকে আয় করে থাকে। ট্রাম্প নিজেও কিছু অ্যাকাউন্টের পোস্ট তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে রিপোস্ট করেছেন।
এক্স-এর অবস্থান-নির্ধারণ ফিচার পুরোপুরি নিখুঁত নয় বলে জানিয়েছেন নিকিতা বিয়ার। ভিপিএন বা ভ্রমণের কারণে অবস্থান ভিন্ন দেখাতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে মার্কিন রাজনৈতিক কনটেন্ট পরিচালনা নতুন কিছু নয় এবং রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক উভয় কারণেই বিদেশিরা এসব অ্যাকাউন্ট চালাতে আগ্রহী হতে পারে।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোশুয়া টাকার বলেন, বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব খাটানোর প্রচেষ্টার ইতিহাস আছে এবং রাজনৈতিক কনটেন্ট অনলাইনে অর্থ আয়ের বড় উৎস হওয়ায় এর আকর্ষণ আরও বাড়ছে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেক শ্যাপিরো বলেন, কেউ কেউ মনোযোগ ও বিজ্ঞাপনের জন্য, কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং কেউ কেউ রাষ্ট্রীয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে এসব অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে।