আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা ২৮ দফা থেকে কমিয়ে ১৯ দফায় আনা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর পরিকল্পনার এই পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। তাদের মতে, আলোচনায় গঠনমূলক অগ্রগতি হয়েছে; তবে পরিকল্পনাটি এখনো চূড়ান্ত নয়।
খসড়ার বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল। বিশেষত রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং জব্দ করা রুশ সম্পদের ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কয়েকটি ইস্যুতে ইউরোপীয় দেশগুলো আপত্তি জানায়। তাদের দাবি—এগুলো ইইউয়ের অধিকারভুক্ত বিষয় হওয়ায় বাইরে থেকে এসব নির্ধারণ করা যায় না।
জেনেভায় বৈঠকে ওয়াশিংটন, কিয়েভ এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিরা শান্তি পরিকল্পনার ২৮ দফা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে, তবে এখনো কিছু কঠিন দফা নিয়ে কাজ চলমান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের যৌথ বিবৃতিতেও ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ অর্জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রতিনিধি জানান, আগের খসড়া থেকে মোট ৯টি প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও কোন প্রস্তাবগুলো অপসারণ করা হয়েছে, তা প্রকাশ করেননি তারা। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব বলেন, দফা কমানো নিঃসন্দেহে একটি ‘অগ্রগতি’, কিন্তু সামনে এখনো বহু জটিলতা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার খসড়ায় উল্লেখ করা হয় যে, যুদ্ধবন্ধ চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে কিছু এলাকা ছাড়তে হতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করা এবং ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করার মতো শর্তও প্রস্তাবে ছিল। এসব বিষয় কিয়েভ ও তাদের মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিকল্পনাকে তার ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ নয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিকল্পনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক জবাব দিতে বলেছেন। অপরদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, “আমরা কি আমাদের মর্যাদা হারানোর ঝুঁকি নেব, নাকি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারানোর ঝুঁকি নেব—এখন আমাদের সামনে সেই কঠিন সিদ্ধান্ত দাঁড়িয়ে আছে।”
শান্তি পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিনিধি, জাপান, কানাডা এবং ইইউয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের মতে ইউক্রেনের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করা দেশটিকে ভবিষ্যতে হামলার দিকে আরও উন্মুক্ত করে দিতে পারে। চলমান যুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় তারা মনে করছেন—যে কোনো সমঝোতার আগে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সতর্ক হতে হবে।
জেনেভার আলোচনার পর পরিকল্পনা ২৮ দফা থেকে কমিয়ে ১৯ দফায় নামানোকে যদিও পরামর্শমূলক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে বাস্তবে এই দফাগুলোই হতে পারে ভবিষ্যৎ শান্তি চুক্তির ভিত্তি। কিয়েভ এই দফাগুলো মেনে নেবে কি না, কিংবা রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে—এ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবু আলোচনায় অংশ নেওয়া দেশগুলো মনে করছে, দফা কমানো অন্তত একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে যে যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে নতুন গতি তৈরি হয়েছে।