আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে অফিস চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাকি কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করার (হোম অফিস) ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করেছে দিল্লির কর্তৃপক্ষ। সোমবার বায়ুমান ব্যবস্থাপনা কমিশন (সিএকিউএম) নির্ধারিত গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের (গ্র্যাপ-৩) আওতায় এই নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়।
দিল্লিতে শীতকাল ঘনিয়ে এলে প্রতিবছরই বায়ুদূষণ ভয়াবহ রূপ নেয়। যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প এলাকা, আবর্জনা পোড়ানো এবং আশপাশের রাজ্যে কৃষিজমিতে খড় পোড়ানোর কারণে রাজধানীর বাতাসে মারাত্মক দূষণ তৈরি হয়। চলতি সপ্তাহে সেই মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে দিল্লি সরকার।
স্থায়ীভাবে সিএকিউএমের নির্দেশনায় রাজধানীজুড়ে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দূষণের মাত্রা একিউআই সূচকে ৪০১ থেকে ৪৫০-এর মধ্যে পৌঁছালে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান-৩ কার্যকর হয়। বর্তমানে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় একিউআই সেই মাত্রার কাছাকাছি থাকায় গ্র্যাপ-৩ অনুসারে প্রশাসন বাধ্যতামূলকভাবে কর্মীসংখ্যা কমিয়ে অফিস পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। একিউআই ৪৫১-এর ওপরে গেলে গ্র্যাপ-৪ কার্যকর হয়, যেখানে শিল্প কারখানা, নির্মাণকাজ ও যানবাহন চলাচলেও আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এর আগে দিল্লি সরকার স্কুলগুলোর ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়। বিশেষ করে অপর্যাপ্ত বাতাস চলাচল বা উচ্চ বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বাইরে খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বায়ুমানের ওপর নির্ভর করে ক্লাস পরিচালনার পরিকল্পনা সাজাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে গুরু তেগ বাহাদুরের ৩৫০তম শহীদী পুরব উপলক্ষে মঙ্গলবার দিল্লি সরকার সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। ফলে ওই দিনে সরকারি দপ্তরগুলোয় উপস্থিতি এমনিতেই কম থাকার কথা ছিল। তবে বায়ুদূষণের কারণে সরকারি–বেসরকারি সব দপ্তরেই হোম অফিসের নির্দেশনা দেওয়ায় শহরের পরিবহনব্যবস্থায় চাপ আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নয়াদিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা বলেন, ‘‘রাজধানীতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারি করছি। গ্র্যাপ-৩ অনুসারে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তার সবগুলোই কার্যকর করা হয়েছে।’’
তিনি আরও জানান, প্রয়োজন হলে দূষণ রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে খোলা স্থানে নির্মাণকাজ, শিল্প কারখানার ধোঁয়া নির্গমন ও রাস্তার ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অভিযান চলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিল্লিতে দূষণের মাত্রা যখন গ্র্যাপ-৩ এ পৌঁছায়, তখন তা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিশু, বয়স্ক এবং শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগীদের জন্য এই পরিবেশ আরও মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রশাসনের এই জরুরি সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: এনডিটিভি।