আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝে আবারও তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা যে কোনো মুহূর্তে সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং। সোমবার বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, দুই কোরিয়ার সম্পর্ক বর্তমানে অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে এবং উত্তপ্ত এই পরিস্থিতিতে ভুল বোঝাবুঝির কারণে বড় ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা এড়ানো যাচ্ছে না।
লি জে মিয়ং বলেছেন, সিউল বারবার সংলাপের আহ্বান জানালেও উত্তর কোরিয়া কোনো যোগাযোগে সাড়া দিচ্ছে না। বরং পিয়ংইয়ং সামরিক সীমান্তে নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করছে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলছে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের পর সীমান্তে এ ধরনের দৃশ্য আর কখনও দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন শেষে তুরস্কগামী বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে লি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার আচরণ অত্যন্ত শত্রুতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং আন্তঃকোরীয় সম্পর্ক ‘‘অত্যন্ত মুখোমুখি অবস্থায়’’ পৌঁছেছে। ন্যূনতম আস্থার অভাব ও পিয়ংইয়ংয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
লি জানিয়েছেন, গত ১৭ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার কাছে সামরিক আলোচনা শুরুর প্রস্তাব পাঠায়। বিশেষ করে সামরিক বিভাজন রেখা—এমডিএল বরাবর স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ ও উত্তেজনা কমানোর জন্য এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কারণ সীমান্তে ক্ষুদ্র কোনো সংঘর্ষ মুহূর্তেই বড় যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত পিয়ংইয়ং কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, চলতি বছর উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা অন্তত ১০ বারের বেশি সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এসব ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার সৈন্যরা সতর্কতা হিসেবে নিয়ম মেনে গুলি চালাতে বাধ্য হন। সীমান্তে এই ধারাবাহিক অনুপ্রবেশ পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে।
প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা দীর্ঘমেয়াদী একটি প্রক্রিয়া হবে। তবে একটি শক্তিশালী শান্তির কাঠামো তৈরি হলে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করাই ‘‘ভালো’’ হবে। তিনি স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া নিয়ে পিয়ংইয়ং বহুবার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এসেছে এবং এটিকে ‘‘উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধের মহড়া’’ বলে দাবি করেছে।
বর্তমানে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার মার্কিন সেনা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছে এবং দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উত্তর কোরিয়া অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে শুরু করে সামরিক অবস্থান—সবকিছুতেই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরে।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কোরীয় উপদ্বীপে আঞ্চলিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা বৈশ্বিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুই দেশের ভুল সিদ্ধান্ত বা অল্প উত্তেজনাও বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
লি জে মিয়ং আবারও জোর দিয়ে বলেন, উত্তরের সঙ্গে আলোচনা জরুরি। ‘‘সংলাপই একমাত্র সমাধান। যোগাযোগ বন্ধ থাকলে উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।’’ তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
সূত্র: রয়টার্স।