১৬ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই নীতিমালা। কিশোরদের নিরাপত্তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
রোববার কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী ফাহমি ফাদজিল এ সিদ্ধান্তের বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, “আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ বছরের চেয়ে কম বয়সীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। আমরা আশা করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও আমাদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।” তিনি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকার আলোচনা করছে এবং তাদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্ত্রী বলেন, সাইবারবুলিং, অর্থনৈতিক অপরাধ, যৌন নিপীড়নমূলক কন্টেন্ট, ফিশিং এবং ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস—এসব ব্যাপক ঝুঁকি থেকে শিশু-কিশোরদের সুরক্ষার জন্য এই নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়ায় কিশোরদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকদের উদ্বেগও বাড়ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফাহমি ফাদজিল জানান, শিশু ও কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনিরাপদ কন্টেন্ট, নেতিবাচক মন্তব্য, ক্ষতিকর চ্যালেঞ্জ—এসব কিশোরদের ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কৈশোরকালীন মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব এড়াতেই শক্ত নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ফাহমি ফাদজিল আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি তাদের দেশে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং আগামী জানুয়ারি থেকে সেখানে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অস্ট্রেলিয়ার এই নীতিমালাই মালয়েশিয়াকে উদ্বুদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার আইনের কাঠামো মালয়েশিয়া সরকার পর্যালোচনা করেছে এবং নিজেদের বাস্তবতায় সেটি প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মালয়েশিয়ার ১৬ বছরের কম বয়সীরা ফেসবুক, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে বা ব্যবহার করতে পারবে না। সরকার জানিয়েছে, বয়স যাচাই প্রযুক্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোরদের সাইবার ঝুঁকি কমাতে বয়সভিত্তিক সীমাবদ্ধতা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। তবে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা জরুরি।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং, যৌন নিপীড়নমূলক কন্টেন্ট প্রচার, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস ও বিভিন্ন সাইবার অপরাধ দ্রুত বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, গুগল, মেটা প্ল্যাটফর্মসের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, ডেনমার্ক এবং গ্রিসও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণে যৌথভাবে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে।
মালয়েশিয়ার নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কিশোরদের ডিজিটাল সুরক্ষা আরও জোরদার হবে বলে সরকারের আশা। তবে একই সঙ্গে এই নীতিমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব হবে—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স।