ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর তেনকাসি জেলায় দুটি বেসরকারি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছেন। সোমবার সকালে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুটি বাসই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তীব্র সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে চিৎকার-আর্তনাদে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন। পরে প্রশাসন ও দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠায়।
তামিলনাড়ু পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মাদুরাই থেকে সেনকোট্টাইগামী একটি বেসরকারি বাসের সঙ্গে তেনকাসি থেকে কোভিলপট্টির উদ্দেশে রওনা হওয়া আরেকটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের মুহূর্তটি ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। দুটি বাসের সামনের অংশ সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন যাত্রী আটকে পড়েছিলেন, যাদের বের করতে দমকল বাহিনীকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে।
পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, মাদুরাই থেকে সেনকোট্টাইগামী ‘কেইসার’ পরিবহনের বাসটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। অতিরিক্ত গতি ও চালকের অসতর্কতার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘর্ষ ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরও জানান, দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনায় আহত ২৮ জনকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েকজন আহতের অবস্থা গুরুতর, তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এক বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, তেনকাসির কাদায়ানাল্লু এলাকায় ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি লিখেছেন, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং তাদের চিকিৎসায় সরকার সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার সময় বাস দুটিতে মোট কতজন যাত্রী ছিলেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া কর্মীদের মতে, সংঘর্ষের মাত্রা দেখে ধারণা করা হচ্ছে বাসগুলোতে যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। দুর্ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পরে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি এবং সড়কে নজরদারি জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বেপরোয়া গতি ও চালকের অবহেলার কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে বলে তারা দাবি করেন।
তামিলনাড়ুর তেনকাসি জেলার এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। নিহতদের পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছে এবং আহতরা জীবনের লড়াই করছেন।