আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইউক্রেন সংকট নিরসনে যে ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে, তার খসড়া প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্রই— এমন দাবি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও। রোববার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতামত মিলিয়েই এই প্রস্তাব তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রুবিও। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সিনেটরের দাবি, এই পরিকল্পনার উৎস যুক্তরাষ্ট্র নয়; বরং অন্য কোথাও থেকে পাওয়া একটি প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইউক্রেনের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মার্কো রুবিও লেখেন, চলমান আলোচনার “একটি শক্তিশালী কাঠামো” হিসেবেই ২৮ দফা প্রস্তাবটি তৈরি হয়েছে। এতে যেমন রাশিয়ার মতামত রয়েছে, তেমনি ইউক্রেনের আগের ও বর্তমান অবস্থানও প্রতিফলিত হয়েছে।
এর আগে হ্যালিফ্যাক্সে এক সম্মেলনে রিপাবলিকান সিনেটর মাইক রাউন্ডস সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রুবিও তাকে ও কয়েকজন সিনেটরকে ফোন করে জানিয়েছেন যে এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নয়। বরং এটি যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছে এবং একজন প্রতিনিধি সেটিকে ইউক্রেনে পৌঁছে দিয়েছেন। রাউন্ডস বলেন, “তিনি স্পষ্ট করেছেন— এটা আমাদের সুপারিশ নয়, আমাদের পরিকল্পনাও নয়। আমরা শুধু একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছি এবং তা পৌঁছে দিয়েছি।”
উল্লেখিত খসড়া পরিকল্পনায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে— ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হতে পারে, তাদের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করতে হতে পারে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করতে হতে পারে। এসব শর্ত নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জবাব দিতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “আমরা শান্তি চাই। এটি অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। ইউক্রেন-রাশিয়ার এই যুদ্ধ কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না। এখন যেভাবেই হোক, এই যুদ্ধ শেষ করতেই হবে।” তিনি আরও বলেন, “জেলেনস্কি যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করতে চান, তাহলে চাইলে তার মতো করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগতভাবে চাপ দিচ্ছে ইউক্রেনকে; আবার কেউ মনে করছেন, ইউক্রেনের জন্য এই পরিকল্পনা কঠোর ও একতরফা। ইউক্রেনের সরকারি অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এর আগে বহুবার বলেছেন, রাশিয়ার দখল করা কোনো ভূখণ্ড তারা কখনো ছাড়বে না।
অন্যদিকে রাশিয়া ইতোমধ্যে বলেছে— অঞ্চল ও সামরিক শর্ত নিয়ে আপস করার সুযোগ খুব সীমিত। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় উভয় দেশের অর্থনীতি ও সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ বাড়ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই নতুন পরিকল্পনা যুদ্ধের পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।
বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর অবস্থানও এই শান্তি প্রস্তাবকে ঘিরে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা শুধু মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে। তবে সিনেটরদের বক্তব্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত অনুযায়ী, ওয়াশিংটন এই প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব খাটিয়েছে।
এখন নজর সকলের— ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে। তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর নির্ভর করছে চলমান যুদ্ধের ভবিষ্যৎ।