আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
গত শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ব্যাপক আতঙ্কে পড়ে। এর পর গত শনিবার আরও অন্তত দুইবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পরে বিভিন্ন স্থানে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, কোনো সময় আরও বড় ভূমিকম্প আসতে পারে এবং এমনকি কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট সময়ের কথাও বলা হয়, যা সাধারণ মানুষকে আরও আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত করেছে। অনেকেই এমন আতঙ্কে রাতভর বাইরে থাকতে বাধ্য হন।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে নির্দিষ্ট সময় বা স্থানে ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। ২০২৩ সালে তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ভারত ও পাকিস্তানে একই ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল ১৫ দিনের মধ্যে সেখানেও একই ধরনের বড় ভূমিকম্প আসবে। তবে তখনও বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, ভূমিকম্পের সময়, স্থান বা মাত্রা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পন প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মাইকেল ব্রুনো বলেছেন, “এ মুহূর্তে এমন কোনো বিজ্ঞান বা ম্যাজিক নেই যেটি নির্দিষ্ট সময়ের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে।” তিনি আরও জানান, বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করেও এখনো কেউ সফলভাবে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দিতে পারেনি।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ভূপদার্থবিদ্যার গবেষক প্রফেসর এগিল হোকসনও বলেন, “ভূমিকম্প কখন হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয়নি এবং ভবিষ্যতেও খুব কঠিন।”
বিশ্বের বিভিন্ন ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায়ও বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টায় থাকলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। বরং ভূমিকম্প হওয়ার পরে তাৎক্ষণিক সতর্কতা দিতে কিছু উন্নত সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশেও ভূমিকম্প সংক্রান্ত গুজব ও অপ্রমাণিত তথ্য ছড়ানো বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আতঙ্কের পাশাপাশি তথ্যের ভ্রান্ত প্রচার জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর এবং এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক ও সরকারি সূত্র থেকে বিশ্বস্ত তথ্য নেওয়া উচিত।
সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের সময় সঠিকভাবে কি করণীয় তা জানা ও প্রয়োগ করাই সবচেয়ে জরুরি। ঘরের ভিতরে নিরাপদ স্থানে থাকা, ভারী জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকা এবং প্যানিক না করা গুরুত্বপূর্ণ।