আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে ২৮ দফা সম্বলিত একটি শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। পরিকল্পনার খসড়া গতকাল ফাঁস হয় এবং বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর হাতে পৌঁছায়। প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ থামাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন— উভয় পক্ষের জন্যই এতে রাখা হয়েছে কঠোর কিছু শর্ত।
প্রস্তাবে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে— ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে একটি বিস্তৃত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তি করতে হবে। এতে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বাধ্যতামূলক থাকবে।
শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে ১০০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার শর্তও রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনার সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। ইউক্রেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— এই দুই অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ আছে। ফলে ইউক্রেন যদি এই অঞ্চলগুলো স্বীকৃতি না দেয়, তবুও এগুলো নিয়ে দাবি করতে পারবে না।
চুক্তিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার। পাশাপাশি কিয়েভকে কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির সুযোগ দেওয়া হবে না।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেন কখনও ন্যাটোর সদস্যপদ পাবে না এবং ন্যাটো দেশটির ভূখণ্ডে কোনো ঘাঁটিও স্থাপন করতে পারবে না। তবে ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং ইইউ বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষ রাজি হলে রাশিয়ার ওপর থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। তবে রাশিয়া যদি শর্ত ভেঙে পুনরায় ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়, নিষেধাজ্ঞা আবারও কার্যকর হবে। একই সঙ্গে রাশিয়াকে ফের জি৭–এ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পুতিনসহ রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, তা প্রত্যাহারের বিষয়ও প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রাশিয়ার যে অর্থ ফ্রিজ করা আছে, তার ২ হাজার কোটি ডলারের একটি বড় অংশ ইউক্রেনের পুনর্গঠন ও শিল্পখাতে বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র অর্ধেক মুনাফা অর্জন করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ আছে। বাকি অংশ দিয়ে যৌথ মালিকানায় একটি গাড়ি তৈরির কারখানা গড়া হবে— যার নাম হবে ইউএস-রাশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ভেহিকেল।
ঝাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের মালিকানা ভাগাভাগির বিষয়টিও পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে— ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েই এর ৫০ শতাংশ মালিক হবে।
চুক্তির আরেকটি শর্ত হলো— ইউক্রেনকে রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠানে রুশ ভাষা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সবশেষে বলা হয়েছে, ইউক্রেন অস্ত্র নির্মাণ অব্যাহত রাখতে পারবে। তবে কিয়েভ যদি কখনও মস্কো বা রাশিয়ার গভীরে আক্রমণ করে, তাহলে যুদ্ধবিরতি বাতিল বলে গণ্য হবে।
সূত্র : বিবিসি