আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানে গ্লু তৈরির একটি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাতজন। বিস্ফোরণের পর পুরো ফ্যাক্টরি ধসে পড়ে এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে যায়। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই কারখানার পাশের বাড়ির বাসিন্দা।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরের ফয়সালাবাদে অবস্থিত গ্লু তৈরির এই ফ্যাক্টরিতে বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয়রা জানান, প্রথমে একটি বড় শব্দ শোনা যায়, এর পর মুহূর্তেই আশপাশের ভবন কেঁপে ওঠে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
ফয়সালাবাদের কমিশনার রাজা জাহাঙ্গীর আনোয়ার জানিয়েছেন, ফ্যাক্টরির রাসায়নিকের গুদামে গ্যাস লিকেজ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। শক্তিশালী বিস্ফোরণের কারণে কারখানার ছাদ ভেঙে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর ছাদও উড়ে যায়। তিনটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া লোকজনকে বের করতে অভিযান শুরু করেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে যাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সাতজন গুরুতর দগ্ধ হওয়ায় তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর কারখানার ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মালিক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অবহেলা, নিরাপত্তাহীন পরিবেশ এবং অনুমোদনবিহীন রাসায়নিক সংরক্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ছয়জনই শিশু। স্থানীয়দের দাবি, ফ্যাক্টরিটি আবাসিক এলাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় বহুদিন ধরেই সেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। তারা বলেন, কারখানাটিতে সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না, রাসায়নিক মজুতও ঠিকভাবে করা হতো না।
উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ফ্যাক্টরির ভেতরের শ্রমিকরা যেমন মারা গেছেন, তেমনি আশপাশের বাড়ির ঘুমন্ত মানুষও হতাহত হয়েছেন। আগুন এত দ্রুত ছড়ায় যে অনেকেই ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাননি।
পাকিস্তানে শিল্প কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয়। দেশটিতে নিয়মিতভাবেই গ্যাস লিকেজ, রাসায়নিকের নিরাপদ সংরক্ষণ না থাকা এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ২০২৪ সালে ফয়সালাবাদের একটি টেক্সটাইল মিলে বিস্ফোরণে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য সাহায্য ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে অননুমোদিত কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ঘটনাটি বর্তমানে তদন্তাধীন, এবং বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানতে রাসায়নিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি দল কাজ শুরু করেছে।